ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে মিলবে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা

পাঁচ বছরে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ বিভাগ। ছবি: সুপ্রভাত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ বিভাগের ৫ম বছর পূর্তি উদযাপিত হয়েছে। সেই উপলক্ষে শিশু রোগী সহ বিভাগের সকল ডাক্তারদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বিকালে হাসপাতালের অডিটেরিয়াম রুমে দিনটি পালিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের হেড অব আপার স্কুল, রুবায়না মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এ পৃথিবীতে একজন মা বুঝেন তার সন্তান তার জন্য কি? আমি নিজেও একজন মহিলা, নিজেও একজন মা। আমি জানি, আমার কাছে আমার সন্তান কেমন। ঠিক পৃথিবীর প্রত্যেক মা জানেন, তার সন্তান তার কাছে কতটা সম্পদ। সুতরাং আমরা চাই, পৃথিবীর প্রতিটা শিশু নিরাপদে বেড়ে উঠুক। সুস্থ থাকুক।

শিশু ও নবজাতক বিভাগের ৫ বছর পূর্তি উদযাপনের দিনে বেশ কিছু সেবা চালু করেছে হাসপাতালটি। যার মধ্যে রয়েছে অটিজম ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র, নবজাতক ও শিশু বিভাগের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ পেডিয়াট্রিক্স ফার্মেসি ও রঙ তুলি নামক আর্ট ক্যাম্প। এ সময় গত ৫ বছরের সফলতা তুলে ধরেন কতৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি বিগত ৫ বছরে ৫০ হাজার বহিরাগত রোগীদের সেবাপ্রদান (ওপিডি), ৫ হাজার ইন প্রেসেন্ট ডিপার্টমেন্ট (আইপিডি), ১ হাজার পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ (পিআইসিইউ), ২ হাজার নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ), ১ হাজার ৫০০ নিউ ভ্রণ কেয়ার, ৫০০ ক্রিটিক্যাল বেবি ট্রান্সপোর্ট, ২০০ সারফেক্টট্যান্ট, ৪০০ জঠিল অস্ত্রোপচার, ১৩ হাজার ভ্যাকসিন প্রধানসহ প্রায় ৫০ হাজারের বেশি রোগীকে সেবা দিয়েছেন।

তাছাড়া গত ৫ বছরে, অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক বিভাগ চট্টগ্রামবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বিভাগটির অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা এবং দক্ষ চিকিৎসকদের দল শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালটির সিইও ড. অনান্থ এন রাও, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফয়সাল আহমেদ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. একে এম রেজাউল করিম, ডেপুটি চিফ অফ মেডিক্যাল সার্ভিসেস ডা. ফজল-ই-আকবর এবং চিফ মার্কেটিং অফিসার অমিতাভ ভট্টাচার্যসহ আরো অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

সিইও ড. অনান্থ এন রাও বলেন, আমরা চাই কোন মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। প্রতিটা শিশু যেন সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পান। যার লক্ষ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে। এ হাসপাতাল রোগীদের উন্নত সেবা দিতে সবসময় প্রস্তুত।

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল দিনরাত সেবা দিতে প্রস্তুত। আমি আমার টিম নিয়ে গর্ববোধ করি। আমি এমনও দেখেছি, আমার টিমের ডাক্তার রাত তিনটায়ও সেবা প্রদান করছেন। এমনকি এই হাসপাতালের কোন ডাক্তার ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে সেবা প্রদান করেন না। আমি চাই, বিশ্বের উন্নত হাসপাতালের চিকিৎসা এই হাসপাতালে পাওয়া সম্ভব।

উল্লেখ্য ২০১৯ সালের ১৫ জুন নগরীর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের পাশে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠী এ হাসপাতালের কার্যক্রম এ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। সাত একর জমির মধ্যে ৫টি ভবন নিয়ে মোট ৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গায় এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের নার্সেস এবং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্থাপত্য সংস্থা এ হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করেন। একটি ইউরোপিয়ান কনসালটেন্ট গ্রুপ নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নে প্রকৌশল, তথ্য প্রযুক্তি এবং বায়োমেডিকেল বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেন।

এ হাসপাতালে রয়েছে সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সেবা এবং কার্ডিয়াক, ট্রান্সপ্ল্যান্ট, নিউরো, অর্থোপেডিক ও গাইনি অবস্‌ ইত্যাদি সম্বলিত ১৪টি মডিউলার অপারেশন থিয়েটার; আছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনসালটেন্ট রুম সম্বলিত বহির্বিভাগ এবং আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড; নবজাতকদের জন্য ৪৪ শয্যাবিশিষ্ট নিওনেটাল ইউনিট এবং ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ। রোগী ও তার সাথে আগত স্বজনদের জন্য হাসপাতাল পরিধির মাঝে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত আছে। হাসপাতালে ৮৮টি সিঙ্গেল, ৭৬টি ডাবল কেবিন, ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, রোগীর স্বজনদের থাকার জন্য ৪০টি রুম এবং ২৭১ জন থাকার ডরমেটরি রয়েছে।

ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. একে এম রেজাউল করিম বলেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে শুধু ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর চিকিৎসাই নয়, মিলবে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা। ট্রাস্ট পরিচালিত এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের মানুষের আর্থিক বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। দেশের শীর্ষ হাসপাতালগুলোর চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে। গত ১৫ বছর ধরে চেষ্টার ফসল আজকের চট্টগ্রামের এই ইম্পেরিয়াল।