আজ মধ্যরাতের পর বরিশাল ও সন্দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে
জোয়ারের উচ্চতা ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি হতে পারে
ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত করতে পারে
নিজস্ব প্রতিবেদক »
এবার নতুন পথে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’! গত কয়েক বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশিরভাগই ভারতীয় উপকূল হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন দিয়ে প্রবেশ করেছে। তবে আজ মধ্যরাতের পর থেকে আঘাত করতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়টি বরিশাল ও সন্দ্বীপের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে আঘাত করবে। এমনই পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুপুরের পর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আজ থেকে এ বৃষ্টি আরো বাড়বে। তবে গতকাল সন্ধ্যা নয়টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য চার নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৬ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্যমতে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যায় ছয়টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া এর প্রভাবে ভারী উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ বুলেটিনে আরো বলা হয়, সাতক্ষীরা, খুলনা, বগের হাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব এলাকার দ্বীপ ও চরাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার বেশি জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রাত নয়টায় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটিকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর ঘোষণা দেয়ার পর এর নাম হয়েছে ‘সিত্রাং’।
কখন কোথায় আঘাত করবে?
গতকাল দুপুর পর্যন্ত সাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটির গতিপথ ছিল নিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে। কিন্তু দুপুরের পর তা সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এবিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গতিপথ দেখে বুঝা যাচ্ছে তা বরিশাল ও সন্দ্বীপের মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। যদি আরো বেশি বাঁক নেয় তাহলে তা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলও আঘাত করতে পারে।’ কখন আঘাত করতে পারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মন্ডল বলেন, ‘আজ সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যবর্তী সময়ে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ সম্পর্কে সানাউল হক মন্ডল বলেন,‘ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।’ তবে ঝড়ের চেয়েও জোয়ারের উচ্চতায় উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতি বেশি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ণিমা থাকায় জোয়ারের উচ্চতা ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।’
উল্লেখ্য, এপ্রিল-মে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। বর্ষার বিদায় ও শীতের আগমনের পূর্বে বঙ্গোপসাগরে এমন ঝড়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া গ্রীস্মের শেষ ও বর্ষার শুরুর পূর্বেও ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। দেশে বড় ধরনের সকল ঘূর্ণিঝড় এই সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় কিংবা ২০০৭ সালের নভেম্বরে ‘সিডর’সহ আরো ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়েছিল এসময়ে।