চট্টগ্রাম মহানগরে আরবান ডিসপেনসারি রয়েছে মোট ৩০টি। এরমধ্যে ৯টি সরকারি এবং ২১টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)-এর আওতায়। প্রতিটি ডিসপেনসারিতে তিনজন মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শুধু আউটডোর চিকিৎসা দেওয়া হয়। যার আওতায় রয়েছে জ্বর-কাশি, প্রেশার, ডায়রিয়া এবং চর্মরোগ। জটিল কোনো রোগী হলে চমেক হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখান থেকে ডেঙ্গুর স্যালাইন, ট্যাবলেট, সিরাপ, ক্যাপসুলসহ অন্তত ১৫ থেকে ২০ পদের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। এখানকার কর্মঘণ্টা সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
নগরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য গড়ে তোলা এসব ডিসপেনসারিতে অনিয়মের শেষ নেই। সুপ্রভাতের প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে প্রায় প্রতিটিতে কোনো না কোনো অনিয়ম পেয়েছেন। এসব ডিসপেনসারিতে দুপুর সাড়ে ১২টার পর কোনো চিকিৎসক বা অফিস সহায়কই থাকেন না। তারা দুঘণ্টা পর সকাল ১০টায় এসে আবার বেশ কিছুক্ষণ রয়ে-সয়ে তারপর রোগী দেখেন। ফলে রোগীরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কোনোটাতে চিকিৎসক আসেন না, কোনোটাতে একজন থাকলে দুজন থাকেন না, কোনোটাতে ফার্মাসিস্ট উপস্থিত থাকছেন না দশদিন ধরে। একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ‘বাসার কাজ সামলাতে দেরি হয়ে যায়। তাই সকালের দিকে আসতে পারি না। অথচ আজ এসেও কোনো চিকিৎসক পেলাম না। শুধু তাই নয়, এখানে সুযোগ পেলেই টাকা নেন ফার্মাসিস্ট-কর্মচারীরা। আমার মেয়ের কাছ থেকে অনেকবার টাকা নিয়েছেন ওরা।’
রৌফাবাদ আরবান ডিসপেনসারিতে এসে মরিয়ম বেগম নামে এক রোগী সেবা না পেয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘তখন কোনো চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট ছিলেন না। ফার্মাসিস্ট ১০ দিনেরও বেশি ছুটিতে রয়েছেন। তাই একমাত্র অফিস সহায়কই চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন! এখানেই শেষ নয়। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘এই ফার্মাসিস্ট এবং অফিস সহায়ক মিলে রোগীর কাছে টাকার বিনিময়ে ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন।’
প্রতিবেদক গত ১৯ সেপ্টেম্বর হালিশহর আরবান ডিসপেনসারিতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে ৩ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার নিয়ম থাকলেও আছেন শুধু একজন। রোগীর দীর্ঘ লাইন। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রায় আধঘণ্টা কথা বলা শেষ হলে রোগী দেখা শুরু করেন। অন্য ডিসপেনসারিতে বিনামূল্যে সেবা দেয়া হলেও সেখানে প্রতি রোগী থেকে ৫ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল।
এসব বিষয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর করলে তারা বারবারই বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা কবে, কখন, কীভাবে নেওয়া হয় তা দেখার সৌভাগ্য সাধারণ মানুষের হয় না।