সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই বাংলাদেশে দাম বাড়াতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের বেশ কয়েকটি খাতে বিপুল ভর্তুকির কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেছেন, “আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।”
স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর শেষে দেশে ফিরে বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলে প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকরা যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে।
জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন- আর কত টাকা ভর্তুকি সরকার দিতে পারবে?
সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধানের এমন মন্তব্য আসে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না।
উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেব। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্ক আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের উপায়টা কী? উপার্যনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপারমারকেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।”
কর না দেওয়া এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ট্যাক্সটা ফাঁকি দেওয়ার দিকেই সবার নজর।তাহরে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?”
গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘নির্বাচনে সহিংসতা চাই না’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “মুশকিল হচ্ছে এখানে আমরা শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু মেম্বার পদে কোনো প্রতীক নেই। তাদের কোনো প্রতীক থাকে না। আপনারা যদি ঘটনাগুলো দেখেন, মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল, তাদের মধ্যেও কাটাকাটি। শুধু যে চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না।”
এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সংঘাত-সহিংসতায় এরইমধ্যে ৪৬ জনের প্রাণহানী ঘটার বিষয়টি তুলে ধরে একজন সাংবাদিক বলেন, অনেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সহিংসতা বাড়ছে বলে কেউ কেউ মত দিচ্ছেন। এ অবস্থায় দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না করে আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার মত পদক্ষেপ নেবে কি না।
উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে, তবে এটা ঠিক, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনও হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।”
বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও তাদের নেতারা যে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, অনেকের আকাঙ্ক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে- সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
“শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভালো প্রার্থী হোক… যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না।
“কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী) বাইরে যারা নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয় ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সে দিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালোই করল।… নির্বাচনও করছে মারামারিও করছে। উস্কেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে…।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনও চাই না। এটা হওয়া উচিৎ না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।”
‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমার অথরিটিতে বাসায় থাকতে দিয়েছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার। অমানবিক একজনকে আমি মানবতা দেখিয়ে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আমার কাছে আর কত চান।’
বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে জানতে চাইলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় এই প্রশ্ন করার জন্য আপনাদের লজ্জা হওয়া দরকার। যারা আমার বাপ-মা, ভাই, আমার ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে। তারপরও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে (খালেদা জিয়া) তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটিতে, আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর আমাদের এতজন আহত। ২২ জন মারা গেছে। একদিনও পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেয়নি। যে এত বড় অমানবিক—তাকেও আমরা মানবতা দেখিয়েছি।’