প্রবাসীদের প্রতি নজর দেওয়া জরুরি
শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রতিটি ভোটারের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের পরিকল্পনা। কিন্তু নজর নেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো প্রবাসীদের ভোট সংগ্রহে। তাই জমা পড়েনি প্রবাসীদের জন্য ব্যবস্থা করা পোস্টাল ভোটের কোনো আবেদন। বিষয়টি জটিল হলেও প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে প্রথমবারের মতো একটা উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে সংশ্লিষ্টরা ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর। এ ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বরাবরে পোস্টাল ভোটের আবেদন করার সুযোগ থাকে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত চট্টগ্রামের আসনগুলোতে কোনো পোস্টাল ভোটের আবেদন জমা পড়েনি। তবে পোস্টাল ভোটের আবেদন যতই আসুক, ভোট সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দ্যেশে গিয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৭০৬ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯০১ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৮০৫ জন মহিলা। তবে কাজের জন্য প্রবাসীর সংখ্যা সঠিকভাবে জানে না সংস্থাটি। কারণ প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসলে সেটা কোথাও তালিকাবদ্ধ হয় না বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এ বছর ৫১ হাজার ১৪৯ জন কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে গেছে। এরমধ্যে পুরুষ ৫০ হাজার ৬৫২ জন এবং মহিলা ৪৯৭ জন। আমরা শুধু ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যারা বিদেশে যান, তাদের তালিকা রাখি। এছাড়া যারা বাইরে পড়াশোনা বা অন্য যে কোনো পারপাসে যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন থাকেন, সেটি আমরা তালিকাবদ্ধ করি না।
পোস্টাল ভোটের আবেদন বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া আমাদের কাছে যা যা নির্দেশনা এসেছে, সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে পোস্টাল ভোটের বিষয়েও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যতজনই আবেদন করুক না কেন, সবার ভোট সংগ্রহের ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো আবেদন আমাদের কাছে আসেনি। সময় তো আরও দুদিন আছে, দেখা যাক।’
প্রবাসীদের ভোট দেওয়া আগ্রহ ও পোস্টাল ভোট নিয়ে জানা আছে কিনা জানতে চেয়ে কথা হয় ওমান, দুবাই, জেদ্দা, কানাডা, মোজাম্বিক ও জার্মান প্রবাসীদের সঙ্গে। তারা জানান, এ পোস্টাল ভোট প্রসঙ্গে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে তাদের জানাও নেই। বিশেষ করে পোস্টাল ভোট শব্দটির সঙ্গে ইউরোপ কিংবা আমেরিকা প্রবাসীরা পরিচিত হলেও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীরা এ বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু জানেন না। এ বিষয়ে সরকার যদি ওসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জানানোর সুযোগ রাখতো তাহলে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পেতো।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এটি সত্যি যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি জটিল প্রক্রিয়া ও সময়ের মধ্য দিয়ে তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করছে। তবে যারা আমাদের দেশে রেমিটেন্স পাঠায়, তাদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। পোস্টাল ভোটের আবেদন শিডিউল ডিক্লিয়ারের (তফসিল ঘোষণা) ১৫ দিনের মধ্যে গ্রহণের নিয়ম থাকলেও প্রথমবারের মতো আরেকটু আন্তরিক হয়ে তাদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন তাদের নির্ধারিত সময় আরও কিছুদিন বাড়িয়ে প্রথমবারের মতো একটি চেষ্টা করার উদ্যোগ নিতে পারে। এটিতে যেহেতু মানুষ (প্রবাসী) অভ্যস্ত নয়, তাই প্রথমবার দৃষ্টান্তমূলক একটি উদ্যেগ নিলে পরে আর বেশি কষ্ট হবে না। এটিতে তারা দেশের নাগরিক হিসেবে মূল্যায়িত হবে।’