সুপ্রভাত ডেস্ক »
ছয় ঘণ্টার ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিতে আবারো ডুবল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার সকালের দিকে টানা ভারি বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ডুবে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরের কয়েকটি এলাকা, রহমতগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজার সংলগ্ন এলাকা, বাকলিয়া ডিসি রোড, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়।
এদিকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরো দুদিন মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
লঘুচাপের প্রভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় পাহাড় ধসের সর্তকতাও জারি করা হয়েছে।
১৬ অগাস্ট থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যে গত চারদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আর শনি, রবি ও সোমবার রাতে হয়েছে ভারি বৃষ্টি। তবে ওই তিনদিন নগরীতে কোথাও তেমন জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি।
সোমবার গভীর রাত থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলাবর সকালে কিছুটা বিরতি দিয়ে টানা বর্ষণ চলে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে মোট ৭৬ মিলিমিটার। অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ৬টার আগের ১৮ ঘণ্টায় মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় নগরীতে।
সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে সকাল ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে তিনঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে দিনের প্রথম জোয়ার শুরু হয়। আর দ্বিতীয় ভাটা শুরু হয় বেলা ১টার তিন মিনিটে। অর্থাৎ যখন ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন ছিল ভরা জোয়ারের সময়। ভাটার সময় শুরুর পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টার আগে কম বৃষ্টি দেখে ঘর থেকে বের হওয়া অফিস-আদালত ও স্কুলগামীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, “গত কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও পানি ওঠেনি তেমন। সেই ভরসায় আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় কোমর সমান পানি। কোনোভাবে রিকশায় করে দুই নম্বর গেট পৌঁছেছি, সেখানেও পানি।”
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভুঁইয়া বলেন, বছরের এই সময়ে লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। এখনো লঘুচাপের প্রভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা এরকম মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
বন্দর নগরীর কয়েক দশকের পুরনো জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৩৬টি খাল ঘিরে নেয়া প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৫৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বেড়েছে।
প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৭২ শতাংশ।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
প্রতি বর্ষায় নগরী চকবাজার, মুরাদপুর, বাকলিয়ার একাংশ, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহরের বিভিন্ন অংশসহ নানা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ভারি বৃষ্টিতে নগরীতে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি। চরম ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। এমনকি গত তিন বছরে বর্ষায় অরক্ষিত খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু হয় শিশুসহ ১০ জনের।
চলতি বছর মে মাসে ও জুনের শেষে কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। এতে চকবাজার, কাপাসগোলা ও আগ্রাবাদে জলাবদ্ধতা হলেও অন্য এলাকাগুলোতে তা তুলনামূলক কম ছিল।
জুলাই মাসে প্রায় প্রতিদিনই নগরীতে বৃষ্টি হলেও এর পরিমাণ ছিল খুবই কম। তখন তেমন জলাবদ্ধতাও হয়নি। অগাস্টের মধ্যভাগে গত চার দিন ধরে বৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার প্রথম ডুবল বন্দর নগরী।
জনদুর্ভোগ চরমে
এদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর কাতালগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে নৌকায় করে লোকজনকে পানি পার হতে দেখা গেছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
সকাল থেকে নগরীর কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, চকবাজার, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, ইপিজেড, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমেছে। এ কারণে সড়কে যানসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
জলাবদ্ধতার কারণে মঙ্গলবার সকালে অফিসগামী এবং নানা প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মিজানুল ইসলাম নামে নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের থেমে থেমে বৃষ্টি এবং গতকাল ভোর থেকে ভারী বৃষ্টিতে কাতালগঞ্জ ও চকবাজারে পানি উঠে যায়। কাতালগঞ্জে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিপুল এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমেছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কাতালগঞ্জে নৌকা চলতে দেখা গেছে। কাতালগঞ্জের অনেক বাসিন্দা নৌকায় বাসা থেকে মূল সড়কে আসা-যাওয়া করছেন।
সড়কের ওপর কোমরসমান পানি থাকার কারণে মুরাদপুর বহদ্দারহাট সড়ক, চকবাজার মুরাদপুর সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এতে সড়কের উভয় পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।