নিজস্ব প্রতিবেদক »
যে কোন ইস্যুতে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে কোন না কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। দাম বৃদ্ধির কারণে দিশেহারা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বাজারে চাল, চিনি, তেল, ডাল, মাংস, ডিম, আদা, রসুন ও পেঁয়াজসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। শুধু কমেছে শীতকালীন সবজির দাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, বক্সিরহাট ও খাতুনগঞ্জে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বেড়েছে চালের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে নাজির-মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা মাঝারি (পাইজাম-লতা) ৬৩ থেকে ৬৮ টাকা, মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) ৫২ থেকে ৫৮ টাকা ও পোলাওয়ের চাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, শীতের বিন্নি চাল ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে
চালের দামের মত তেলের দামও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে তেলের দাম বাড়ছে বলে জানান খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সয়াবিন লুজ ও সুপার এবং পাম তেলে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়তি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, বোতল সয়াবিন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, পাম অয়েল (লুজ) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, পাম অয়েল (সুপার) ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের বাইরের খুচরা দোকানে তেলের দাম কেজি প্রতি আরো ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি বিক্রি করা হয়েছে।
বেড়েছে মাংসের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে বক্সিরহাট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বিক্রি করা হলেও এই সপ্তাহে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বড় কক মুরগি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি কেজি ২৮০-৩০০ টাকা।
অন্যদিকে হাঁসের মাংস প্রতিকেজি ৬০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস কেজি প্রতি ১০০ টাকা বেড়ে ১০০০ ছাড়িয়েছে। বক্সিরহাটে খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কমছে না মাছের দাম
বাজারে সাগরের মাছের পর্যাপ্ত যোগান থাকলেও কোনভাবে কমছে না মাছের দাম। রিয়াজউদ্দিন বাজারে দেখা যায়, বাজারে সাগরের লইট্যা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পোয়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মাঝারি সাইজের ইলিশ ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় সাইজের রুই বিক্রি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) সাইজ ভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এর বাইরে আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। পুঁটি ২২০ টাকা, কাতল ৪০০, শিং ৪৫০, টাকি ৪৫০, কই ৬০০, রূপচাঁদা ৭০০ থেকে ৯০০, বোয়াল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন-আদার
খাতুনগঞ্জের বাজারে পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা কমলেও বক্সিরহাট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। উভয় বাজারে রসুন ও আদার দামও বেড়েছে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে পেঁয়াজ (আমদানি) কেজিপ্রতি ৩২ থেকে ৩৩ টাকা বিক্রি হলেও বক্সিরহাট ও রেয়াজউদ্দিন বাজারে কেজিপ্রতি ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উভয় বাজারে চায়না রসুন ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া চায়না থেকে আমদানিকৃত আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও মায়ানমারের আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে। দেশি আদার সংকট থাকলেও কিছু কিছু দোকানে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কাঁচা মরিচের দামে সেঞ্চুরি
নিত্যপণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। গতকাল বাজারে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। এর আগে ছিল কেজি ৮০ টাকা।
অন্যদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শিম ও টমেটো কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। বাজারে পুরোনো আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, নতুন আলু ৪০, বেগুন ৫০ টাকা, পটোল ৪৫, শিম (উত্তরবঙ্গের) ৪০, চট্টগ্রামের শিম ৫০ টাকা। বরবটি ৫০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, পেঁপে ২৫, করলা ৫০, মুলা ২৫, গাজর ৬০, টমেটো ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ ৫০, ফুলকপি ২০ থেকে ৩০, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ ও লালশাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মূলাশাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। লেবু প্রতি ডজন ৩০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাঁসের ডিমে ডাবল সেঞ্চুরি
এক মাসের ব্যবধানে নগরীর বাজারে আবারো বাড়ছে ডিমের দাম। বক্সিরহাট বাজারে লেয়ার মুরগির লাল ও সাদা ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ১১৪ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ১৮৫ টাকা। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাঁসের ডিমের দাম বাড়লেও শেষ সপ্তাহে তা কমে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গতকাল থেকে আবারো বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
ডিমের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বক্সিরহাটের ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমরা পাহাড়তলী থেকে বেশি দামে কিনছি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। মূলত ইজতেমার কারণে এদিকে ডিম আসছে না তাই আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে।’