চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে নালায় পড়ে হুমায়রা (৩) নামে আরেকটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে আনন্দপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করার পর শিশুটিকে মা ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, শিশুটি বাড়ির পাশের একটি দোকানে যাওয়ার সময় খোলা একটি নালায় পড়ে যায়। নালার স্ল্যাবটি তোলা থাকায় ওপরে পানি জমে ছিল, ফলে নালাটি বোঝা যায়নি। অসাবধানতাবশত শিশুটি সেখানে পা রাখলে পানির স্রোতে ভেসে যায়। শিশুটিকে নালায় পড়ে যেতে দেখে আশপাশের কয়েকজন উদ্ধারের চেষ্টা করেও পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হলে আমাদের উদ্ধারকর্মীরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের চকবাজার হিজড়া খালে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু সেহরিশের। এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরীর উন্মুক্ত খাল-নালার পাড়ে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তা কাজে আসেনি। শিশু সেহরিশের মৃত্যুর পর চসিক ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়টি জোনের ৫৬৩টি জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ৮৬৩টি স্ল্যাব বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দেওয়া হয় বাঁশের ঘেরাও এবং বসানো হয় স্ল্যাব। কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক স্থানের বাঁশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আবারও নালায় পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এনিয়ে গত আট বছরে খাল, নালা ও ড্রেন পড়ে অন্তত ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন ।
নগরীতে ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা আছে। ২০২৪ সালে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় নালায় পড়ে সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম ও চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে দুই শিশু, সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় ড্রেনে পড়ে তিন বছরের শিশু ওজাইফা ও শুঁটকিপল্লি এলাকার কলাবাগিচা খালে পড়ে আজিজুল হাকিমের (৩০) মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে সিডিএ আবাসিক এলাকার খালে নেমে আবদুল্লাহ (৫), বাদামতলা এলাকায় নালায় পড়ে নিপা পালিত (২০) ও আগ্রাবাদের রঙ্গিপাড়ায় ইয়াছিন আরাফাত নামে দেড় বছরের এক শিশু মারা যায়।
২০২২ সালে কালুরঘাটের ওসমানিয়া খালে পাওয়া যায় এক নারীর লাশ। ২০২১ সালে ষোলোশহর চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে মৃত্যু হয় চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের (৬৫)। একই বছর মুরাদপুর মোড়ে নালায় ডুবে ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ (৫০), আগ্রাবাদ মোড়ে ড্রেনে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া (১৯) ও ষোলোশহর রেলস্টেশন এলাকার খালে পড়ে কামাল উদ্দিনের (১০) মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় ড্রেনে পড়ে শিশু আল আমিন ও ২০১৭ সালে এমএম আলী সড়কের নালায় পড়ে মারা যান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া।
চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক একটি পত্রিকাকে বলেন, বারবার দুর্ঘটনার দায় কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। নালায় শুধু স্ল্যাব দিলেই হবে না, নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, দরকার হলে স্থানীয়দের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে।
আমরাও বলতে চাই আর কত প্রাণ ঝরলে চসিক এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নালা ও খালগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।