নিয়ন্ত্রণহীন ওষুধের বাজার বা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। একদিকে ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এর মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে ঝুঁকিময়। এ সময়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশ জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
সাত বছর আগে দায়ের করা একটি রিট মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের বেঞ্চ সোমবার যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ।
রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল।ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুসারে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে। সে বিধান অনুসারে ১৯৯৩ সালে সরকার ৭৩৯টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে। কিন্তু পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি হয়। সেখানে ১১৭টি ওষুধের তালিকা দিয়ে বলা হয়, এসব ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে এবং তালিকাবর্হিভূত সব ওষুধের দাম উৎপাদনকারী কোম্পানি নির্ধারণ করবে।
সৈয়দ এজাজ বলেন, ওই সিদ্ধান্তের সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে জনস্বার্থে এই রিট মামলা করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ ওই বছরের ৩১ জুলাই রুল জারি করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৪ সালের সার্কুলার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। রুল শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ১১ ধারায় সরকারকে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুসারে সরকার অধিকাংশ ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে এবং ১৯৯৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৭৩৯টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। পরবর্তীতে উক্ত ক্ষমতাকে সীমিত করে ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হাতে রেখে একটি সার্কুলার ইস্যু করে, যেখানে অন্যান্য সকল ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এটি যে গুটিকয়েক ব্যক্তি না প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে লাভবান করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে ডা. নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে যে জাতীয় ঔষধ নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে বৈপ্লবিক কিছু নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। তকন তা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল দেশে। এ সিদ্ধান্ত বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছিল।
ওষুধ যেহেতু জীবনধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম, সে কারণে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নাগরিদের বেঁচে থাকার অধিকার সম্পর্কিত। এ কারণে মূল্য নির্ধারণে সরকারের ক্ষমতা থাকা দরকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশকে আমরা স্বাগত জানাই।