নিজস্ব প্রতিবেদক »
লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। চিনির পর এবার অস্থির আদা-পেঁয়াজ-রসুনের দাম। পেঁয়াজে ভারতের আমদানি বন্ধসহ এলসি খরচ বৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরের খাতুনগঞ্জ, রেয়াজউদ্দিন বাজার ও বকশিরহাট ঘুরে দেখা যায় ১৫ দিন ধরে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে চড়া দরে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ সংকটের কারণে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেশ চড়া।
পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৫৪ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে এলসি (ঋণপত্র) খরচ বাড়ার কারণ দেখিয়ে পেঁয়াজের পাশাপাশি বাড়তে শুরু করেছে আদা ও রসুনের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বাজারে মিয়ানমারের আদা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর ভিয়েতনামের আদা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার বেশি। তাছাড়া বাজারে দেশি ও চায়না আদার সংকট রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে দাম বাড়তে শুরু করেছে রসুনেরও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা রসুনের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি চীনা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে। আর দেশীয় রসুনের সংকট রয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চাক্তাই কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী মো. ফোরকান জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আমরা পাইকারি বাজারে কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করছি। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।
খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্যের আড়ত হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় পেঁয়াজে চাপ বেড়েছে।’
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে।
গতকাল কাঁচা বাজারে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। তাছাড়া সোনালি মুরগি ও দেশি মুরগির দাম তেমন কমেনি। বাজারে সোনালি বিক্রি হয়েছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা ও দেশি ৬০০ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে একই দামে বিক্রি হয়েছিল।
ডিম ব্যবসায়ী কালাম সওদাগর বলেন, গত সপ্তাহে অতিরিক্ত গরমে বেশি ডিম নষ্ট হয়েছিল। ফলে ডিমের দাম কমতির দিকে থাকলেও আজ (গতকাল) বাজারে কিছুটা বেড়েছে। হয়তো ব্যবসায়ীরা খরচ সমন্বয় করে কয়েকটাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেনি ও গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে গরুর দাম বাড়ায় খরচ বেশি পড়ছে। ফলে গরুর মাংস বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে হাঁড়সহ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও হাঁড় ছাড়া মাংস ৯০০ টাকার উপরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১১০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকায়।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মাছের দাম রয়েছে স্থিতিশীল রয়েছে। সামুদ্রিক মাছের যোগান কমাতেই স্থানীয় প্রজেক্ট ও পুকুরে চাষ করা মাছের চাপ বেড়েছে। তাছাড়া বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার নিচে কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বাজারে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, কাতলা বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। সমুদ্রের কোরাল বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভালো মানের চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটো, বরবটি ও বেগুন ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সব সবজির দাম বেশ চড়া। ঝিঙ্গা, করলা, কাকরোল, ঢেড়শের দাম ১০০ টাকার উপরে হলেও যোগান বাড়াতেই প্রায় সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ঈসমাইল সওদাগর বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির যোগান বাড়াতেই একটু কমতির দিকে সবজির বাজার। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি আসলে আরও কমবে।
গতকাল বকসিরহাট বাজারে টমেটো বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও ভালো মানের বেগুন বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায়। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙ্গা ১২০ টাকা, তিত করলা প্রতিকেজি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বকসিরহাট বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. ফারুক বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।