-
গুলিতে আহত ৫ বাংলাদেশি
-
বিজিপি ও অন্যান্য বাহিনীর ২৬৪ জন আশ্রয়ে
-
অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় অনেকেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার, প্রতিনিধি নাইক্ষ্যংছড়ি »
দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত। শনিবার থেকে নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাত-সংঘর্ষ থামছেই না। দুই বাহিনীর গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে সীমান্তজুড়ে।
এদিকে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ও থাইংখালী এলাকায় চারজন এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
কক্সবাজারের আহতরা হলেন, পালংখালী ইউনিয়নের নলবনিয়া এলাকার আয়ুবুল ইসলাম, রহমতেরবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন, পুটিবনিয়া এলাকার মোবারক হোসেন ও মো. কালা।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও মোবারকের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে সৈয়দ আলম (৩৫) নামের এক বাংলাদেশি আহত হন। গোলাগুলির কারণে নিজ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি প্রথমে গাছে লাগার পর সৈয়দ আলমের কপালের পাশ দিয়ে চলে যায়। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে শুধু দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্য না, বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকরাও।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতবিল সীমান্ত দিয়ে ১১৪ জন এবং ঘুমধুম, টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে আরও ২ জন পালিয়ে আসে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, পালংখালী সীমান্ত দিয়ে এসেছে ১১৪ জন।
তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু বিজিপি সদস্য নয়, সেনা বাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক রয়েছে। এ মুহূর্তে কতজন আহত রয়েছে, বলা যাচ্ছে না। বিজিবি এদের হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
সোমবার দিবাগত রাত ও মঙ্গলবার সকালে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন। উখিয়ার নিকটবর্তী ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারের ছৈয়দ নুর শিকদারের বাড়িতে ওপার থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মোটর শেলের গোলা এসে পড়ে। এতে তার বাড়ির কাচের জানালা ভেঙে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন। ভয়ে বাড়ি থেকে পরিবারের সব সদস্য বের হয়ে পড়েন।
সোমবার সকাল থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হয় গুলি ও মর্টার শেল। গুলির মুহূর্মুহু শব্দে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘর ছেড়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিম কূল, তুমব্রু বাজার পাড়া, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, জলপাইতলী, বাইশপাড়িসহ ৭/৮ গ্রামের মানুষ। এরইমধ্যে দুপুরে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা একটি মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হয়েছেন স্থানীয় জলপাইতলী গ্রামের গৃহবধূ হোসনে আরা ও এক রোহিঙ্গা।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতায় টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় সোমবার এক রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করে বিজিবি। এরআগে মিয়ানমার বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড গোলাগুলির মুখে টিকে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১৫ জন মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য। তাদের মধ্যে আহত ৯ জনকে কঠোর নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
তুমব্রু বাজার এলাকা ছেড়ে আসা বিশু ধর জানান, আমি প্রাণ রক্ষার্থে সবকিছু ফেলে সপরিবারে উখিয়ায় ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিতে যাচ্ছি। আমার বাজারে মুদির দোকান ও বাড়ি রয়েছে। জীবনের মায়ায় সব ফেলে চলে এসেছি। জানিনা ভাগ্যে কি আছে?
সূত্র বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে বসবাস করা মিয়ানমারের চাকমা জাতি ও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হচ্ছেন। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা। এদিকে সীমান্তে মর্টার শেলে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানানোর কথা জানান রিজিওয়ান কমন্ডার।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সীমান্ত শিবির দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী দলগুলোর সংঘর্ষ চলছে। ক্রমাগত গুলি, মর্টার শেল ও রকেট বিস্ফোরিত হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এক বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সীমান্তে দুজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে।



















































