চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১০৮ জন। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাব ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবের ৩৬৫টি নমুনার মধ্যে ১০৮টি করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এই ১০৮টি পজিটিভের মধ্যে নগরীতে ৬০ জন ও বিভিন্ন উপজেলায় ৪৮ জন। এদিকে নতুন করে ১১৩ জন শনাক্ত হওয়ায় চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪,৩৮৬ জন, এদের মধ্যে সুস’ হয়ে বাড়ি গেছে ২৯৪ জন এবং মারা গিয়েছে ১০২ জন।
সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ১৪৩টি নমুনার মধ্যে ১৫টি করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে, আক্রানত্ম ১৫ জনই নগরীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৭২টি নমুনার মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ৩৮ জনের এবং এরা সবাই নগরীর। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি নমুনার মধ্যে ৫৫ জন পজিটিভ হয়েছে, এরমধ্যে নগরীর ৭ জন ও বিভিন্ন উপজেলার ৪৮ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে কোনো নমুনা ছিল না।
উপজেলার ৪৮ জনের মধ্যে পটিয়ায় ২২ জন, বোয়ালখালীতে ৩ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ জন, রাউজানে ৫ জন ও সীতাকুন্ডে ১৫।
এদিকে গতকাল বুধবার নতুন করে ১০৮ জন করোনা শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা হলো ৪,৩৮৬ জন।
এদিকে চট্টগ্রাম ইউএসটিসি’র বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৫ জন চিকিৎসককে সাক্ষাতের জন্য ডাকলেও সাড়া দিয়েছেন মাত্র ৬ জন। বাকি ১৯ জন চিকিৎসক করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
চিকিৎসক না পাওয়ায় উদ্বোধনের দুই দিন পরও করোনা ইউনিট চালু করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. কামরুল হাসান সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা ২৫ জন চিকিৎসককে করোনা ইউনিটের জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট (সাক্ষাৎকার) দিয়েছিলাম। কিন্তু ১৯ জন চিকিৎসক সাক্ষাতকারে আসেনি। তারা করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
কেন চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে নারাজ, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের পরিবার নাকি বাধা দিচ্ছে। পরিবার নাকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা না দিতে বলেছেন। তাই তারা করোনা চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছেন না।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭০টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে। এছাড়া ২৭টি এইচডিইউ ও ৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ১০০ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালটিতে এখন মাত্র ৬ জন চিকিৎসক ও ১৮ জন নার্স রয়েছে। ৬ জন চিকিৎসক ও ১৮ জন নার্স দিয়ে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট কীভাবে পরিচালনা করা হবে? বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. কামরুল হাসান এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা রাজি না হলে আমরা হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হবো।’
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারের মধ্যে বাজারে হঠাৎ অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি দামে বিক্রি করলেও সিলিন্ডারগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে উঠে আসছে ভয়াবহ চিত্র।
বুধবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় ও এনায়েত বাজারে ভ্রাম্যামাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযানে নগরীর এনায়েত বাজার এলাকারনএকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এবং আন্দরকিল্লা মোড়ে আরেকটি দোকানকে অধিক মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, করোনার সংকটের মধ্যে গুণগত মানসম্পন্ন অক্সিজেন সিলিন্ডার ন্যায্যমূল্যে প্রাপ্তি নিশ্চিতে অভিযান পরিচালিত হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার দুই ধরনের হয়ে থাকে- ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড ও মেডিক্যাল গ্রেড। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেন প্রায় শতভাগ বিশুদ্ধ হতে হয়, যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয় না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জাহাজ থেকে পাওয়া মানহীন সিলিন্ডারগুলোতেও কোনোরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অক্সিজেন রিফিলিং করছে এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তিনি আরো বলে, অভিযানে নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার বিসমিল্লাহ মেরিন স্টোর নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারী অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানির কোন ধরনের ইনভয়েস ও প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। নিজেদের মতো করে দাম বৃদ্ধি করে বিক্রয় করে আসছে এসব মানহীন অক্সিজেন সিলিন্ডার। প্রতিষ্ঠানটির ফায়ার এক্সটিংগুইশার আমদানির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি ও মজুদের জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তর প্রদত্ত লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র নেই। এমনকি তার বিক্রয় ক্যাশমেমোতে থাকা কার্বন কপিতে ক্রেতার নাম ঠিকানা লেখা ছিল না। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই নগরীর মেডিক্যাল মোড়, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, আসকার দীঘির পাড়ের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার সংগ্রহ করে থাকেন।
অনেকে এখন কিছু না বুঝেই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে ঘরে মজুদ করে রাখছেন। এতে দু ধরনের বিপদ ঘটতে পারে, প্রথমত এইসব মানহীন সিলিন্ডার যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। দ্বিতীয়ত, একজন রোগীকে যেনতেনভাবে অক্সিজেন দিলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কর্তৃক্ষকে এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সাধারণ মাানুষের মধ্যে সচেতনতা আনতে হবে। সেসঙ্গে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসুবিধা বৃদ্ধি করে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
মতামত