আনোয়ারা, কর্ণফুলী, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ৭ ও ৮ জুন ৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের বিআইটিআইটি ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে জট পরে যাওয়ায় বিআইটিআইটি কর্তৃপক্ষ নমুনা ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু র্দীঘ ১৮দিন পার হয়ে হয়ে গেলেও রিপোর্টগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। তবে পরের রিপোর্টগুলো সঠিক সময়ে পাওয়া গেছে বলেও জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলার বাইরের থেকে শহর, কর্ণফুলী, চন্দনাইশ থেকেও পরীক্ষা করানোর জন্য আসে। গত ৭ ও ৮ জুন উপজেলার সন্দেহভাজন ৬৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজহারহাট ল্যাবে পাঠানো হলে সেখানে জট পরে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে সব পরীক্ষার ফল আমরা হাতে পাইনি।
এই যখন একটি উপজেলার চিত্র সে সময় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ৪০ জনসহ মোট এক হাজার ৬৬১ জনের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেল । এছাড়া নতুন তিন হাজার ৮৬৮ জন শনাক্তসহ মোট শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে এক লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে দাঁড়াল।
প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের ১১১তম দিনে এসে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮৬৮ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটি।
শুক্রবার দুপুরে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২৪৬ জন। নমুনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি ল্যাব।
শুক্রবার (২৬ জুন) সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের সরকারি, বেসরকারি ৬টি ল্যাব এবং কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে মোট ১ হাজার ৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুর হারেও এগিয়ে। তবে সুস্থতার হারে কিছুটা পিছিয়ে আছে।
চট্টগ্রামে প্রতি ১শ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এই হার দেশের গড় শনাক্তের হারের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষায় দেশে গড় শনাক্তের হার ১৮.৫৭ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্তের হার ২৮.৭৩ শতাংশ (২৪ জুনের তথ্য অনুযায়ী)। হিসেবে দেশের গড় শনাক্তের হারের তুলনায় চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষা যারা করছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ২৮ শতাংশের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এটি দেশের গড় শনাক্তের হারের তুলনায় অনেক বেশি। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব না মানা, মাস্ক না পরা, বিনা কারণে বাইরে ঘোরাফেরা ও আড্ডা দেয়া এবং সর্বোপরি সরকারি নির্দেশনা না মানার প্রবণতার কারণেই চট্টগ্রামের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে গণপরিবহনসহ সবকিছু উন্মুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২৪ জুন পর্যন্ত মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার মোট ২৫ হাজার ১৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মহানগরের বাসিন্দা নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন ১৫ হাজার ৭৯২ জন। বাকি ৯ হাজার ৩৩৮ জন চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার বাসিন্দা। নমুনা পরীক্ষা করানো ২৫ হাজার ১৩০ জনের মধ্যে করোনা সনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২২০ জনের। সনাক্তের এই হার শতকরা ২৮.৭৩ শতাংশ। বিপরীতে দেশে গড় শনাক্তের হার ১৮.৫৭ শতাংশ।
এই যখন পরিস্থিতি তখন ১৮ দিনেও রিপোর্ট না পাওয়ার ঘটনা অমার্জনীয়। আমরা প্রথম থেকেই দেখছি, করোনা মহামারি ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একপ্রকার ঢিলেমি আছে। এ বিষয়ে খবরদারি করার লোকও বোধহয় চট্টগ্রামের জন্য নেই। কেন এই রিপোর্টগুলো এখনও পাওয়া গেল না তার একটি ব্যাখ্যা অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা বাড়লেও চট্টগ্রামে যে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়েনি এটি তার উজ্জ্বল নজির।