রেললাইন উচ্চতা জটিলতায় ফিডার রোড-৩
ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রিতায় ফিডার রোড-১
ভূঁইয়া নজরুল <
শেষ হয়েও হইলো না শেষ। ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগর পাড়ের আউটার রিং রোডের প্রধান অংশের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। কিন্তু নগরীর অভ্যন্তর থেকে এই রোডে যুক্ত হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই। এক প্রান্তে পতেঙ্গা এবং অপর প্রান্তে ফৌজদারহাট যুক্ত হওয়ার ভাল মাধ্যম, তবে হালিশহর আনন্দবাজার চৌচালার অপ্রচলিত রাস্তা দিয়ে অনেক যানবাহন চলাচল করলেও দুর্ভোগ অনেক। রিং রোডের কার্যকারিতা বাড়াতে এই প্রকল্পের সাথে দুটো ফিডার রোডও অনুমোদন হয়েছিল। সেসব ফিডার রোড এখনো শেষ হয়নি।
ফিডার রোডের অগ্রগতি দেখতে গতকাল দুপুরে আউটার রিং রোডে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট প্রান্তে ফিডার রোড-৩ এর ৯০০ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। রিং রোড থেকে দেখা যায় ফ্লাইওভারের কাজ পুরোপুরি শেষ। কিন্তু হেঁটে সাগরিকার দিকে আসতে রেললাইনের (চট্টগ্রাম বন্দর ও ফৌজদারহাটের মধ্যে সংযোগকারী রেললাইন) উপরে দেখা যায় খালি। রেললাইনের উভয়দিকে ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষ থাকলেও মধ্যবর্তী অংশ খালি। এছাড়া স্টেডিয়ামের উপরের খালের অংশেও ফ্লাইওভারের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। এই ফ্লাইওভারটি গিয়ে নামবে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে সাগরিকা রোডের সাথে। এতে অলংকার মোড় থেকে গাড়িগুলো সহজে এই ফিডার রোড দিয়ে আউটার রিং দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
রেললাইন জটিলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘রেলওয়ে থেকে আমাদের প্রথমে বলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার উঁচুতে গার্ডার বসাতে। কিন্তু এখন আবার বলা হলো ৮ মিটার উঁচুতে বসাতে। তাই নতুন করে আরো দুটি পিলার বসিয়ে উচ্চতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে।’
ফিডার রোড তিন নম্বরে রেললাইনের উচ্চতা জটিলতা থাকলেও ফিডার রোড-১ আরো পিছিয়ে। পতেঙ্গা নারিকেল তলা দিয়ে খেজুরতলা পয়েন্টে এসে রিং রোডের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা ফিডার রোড-১।
সরেজমিনে দেখা যায়, রিং রোডের নিচ দিয়ে একটি রোড এবং রিং রোডের পাশ দিয়ে একটি রোড নির্মাণের কাজ চলছে। এবিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা যথাসময়ে পায়নি বলে কাজে ধীরতা ছিল। তবে এখন দ্রুত কাজ করছি। নারিকেল তলা থেকে আসা ফৌজদারহাটমুখী গাড়িগুলো রিং রোডের নিচ দিয়ে এসে প্রধান সড়কের সাথে যুক্ত হবে। এছাড়া পতেঙ্গামুখী গাড়িগুলো বাম দিকের একটি লেন দিয়ে রিং রোডের সাথে যুক্ত হবে।
ফিডার রোডের কাজ কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফিডার রোড-১ ও ফিডা রোড-৩ এর কাজ শেষ করা যাবে। আর তা করা গেলে নগরীর অভ্যন্তর থেকে গাড়িগুলো সহজে আউটার রিংরোডে যাতায়াত করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম চার লেনের সড়ক নির্মাণে খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উঁচু হবে সড়কটি। এই রোডের সাথে পতেঙ্গা স্টিলমিল নারিকেল থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত একটি রোড শহরের সাথে যুক্ত থাকবে যা ফিডার রোড-১ হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে সাগরিকা থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত একটি রোড যুক্ত থাকবে যা ফিডার রোড-৩ হিসেবে পরিচিত। এই দুটি রোড ছাড়া সাগড় পাড়ের আউটার রিং রোডে যাতায়াতের অন্য কোনো পথ নেই। তবে এই প্রকল্পের আওতায় ফিডার রোড-২ নামে আরো একটি রোড ছিল। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে তা অনুমোদন না পেলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে ফিডার রোড-২ অনুমোদন পাচ্ছে। ফিডার রোড-২ বড়পোল থেকে শারীরিক শিক্ষা কলেজের সামনে দিয়ে হালিশহর মুনির নগর চৌচালা হয়ে রিং রোডের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা। এখন এই রোডটি নির্মাণে তোড়জোড় চালাচ্ছে সিডিএ। এই রোডটি নির্মাণ করা হলে আউটার রিং রোডের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। শহরের ভেতর থেকে সহজে গাড়ি রিং রোডে যাতায়াত করতে পারবে।