মাদক সা¤্রাজ্য দিন দিন যে শক্তিশালী ও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ প্রতিনিয়তই ইয়াবা উদ্ধার ও ‘আইস’ এর মতো ভয়ংকর মাদকের আটক সংবাদ। বাংলাদেশ মাদকের রুট হিসেবেও যে ব্যবহৃত হচ্ছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে আটককৃতদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে। গত বুধবার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্তৃক কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের পাশের এলাকা থেকে প্রায় দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ আটক করার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে। শতভাগ এমফিটামিনযুক্ত ক্রিস্টাল মেথ মাদকসেবীদের কাছে ‘আইস’ নামে পরিচিত। আটক হওয়া দু কেজি ‘আইস’ এর দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। এই মাদকের ব্যবহারকারীরা ধনিক শ্রেণির। এর আগে গত জুন মাসে প্রায় ৫০০ গ্রাম ক্রিস্টালমেথ আটক করা হয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গত দু ’বছর ধরে ‘আইস’ বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। পশ্চিমা বিশ্ব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এই মাদকের ব্যবহার বেশি। এটি ইয়াবার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর এবং অনেক বেশি পরিমাণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে। অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক বলেন, এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।
একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে বলা হয়েছে, ক্রিস্টাল মেথ গত মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়েও এসেছে। ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে র্যাবÑ৭ ১৫০ গ্রাম মাদকসহ ২জন মাদক কারবারিকে চট্টগ্রামের মুজাফফর নগর থেকে গ্রেফতার করেছে। বিদেশ প্রবাসীদের মাধ্যমেও এটি আসে। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে এটি বাংলাদেশে আসছে অর্থাৎ বাংলাদেশ এই মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঐ দৈনিকের তথ্যে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৮ জুন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) ৫০০ গ্রাম আইসসহ একজন নাইজেরিয়ান নাগরিককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। দেশের মানুষকে মাদকের ভয়ংকর সর্বনাশা পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করতে নিয়মিত মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান চালানো প্রয়োজন। প্রায়ই ইয়াবার চালান আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এতে অনুমিত হয়, এই সর্বনাশা মাদক কিভাবে আমাদের তরুণ সমাজকে সর্বনাশের অতল খাদে নিক্ষেপ করছে।
ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়লেও এর গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নইলে কিভাবে ইয়াবা একেবারে গ্রাম শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে পারছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৪ ফেব্রুযারি বিমান পথে মাদকের চালান রোধে স্ক্যানার এবং ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়। জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ।
আমরা মনে করি, এই নির্দেশ প্রতিপালনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটছে কক্সবাজার জেলার নানা স্পটে, এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে। সুতরাং কোন পক্ষ থেকে শিথিলতার সুযোগ নেই। সমাজকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে না পারলে উন্নয়ন, অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। দেশে নানা অপরাধের বিস্তৃতিও ঘটাচ্ছে মাদক। সুতরাং মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাদক সেবনের কুফল জনগণের কাছে তুলে ধরার কাজটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়