সতর্কতা মানছেন না কিছু পর্যটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র কারণে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারে পর্যটকসহ স্থানীয়দের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে সাগরের পানি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি শুরু হলেও সৈকত ছেড়ে যায়নি পর্যটক বা স্থানীয়রা। অন্য দিনের তুলনায় সমুদ্রসৈকতে কিছুটা কমেছে মানুষের উপস্থিতি। তবে হাল্কা বৃষ্টি ও সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে সাগরে নামছেন কিছু পর্যটক।
লাইফগার্ড ও সৈকতকর্মীরা পর্যটকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন, মাইকিংও করছেন। তবে নির্দেশনা না মেনে অনেকে সমুদ্রে নেমে পড়ছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটি অবস্থান করছে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে। ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল। এ ছাড়া গুঁড়ি, গুঁড়ি ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত মানতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ড কর্মীরা বলছেন, সমুদ্রে নামতে চাওয়া পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বৈরি আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকায় হাঁটু পানির গভীরে সাগরে না নামার জন্য হ্যান্ডমাইকে বারবার সতর্ক করছেন লাইফ গার্ড ও কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মীরা। যারা সৈকতের ছাতা-চেয়ারে বসে বা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখছেন তাদের মুখে অতৃপ্তির সুর।
সৈকতে দায়িত্বরত সী-সেইফ লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। হাঁটু পানির গভীরে সাগরে না নামার জন্য হ্যান্ডমাইকে বারবার সতর্ক করা হলেও অনেক পর্যটক তা মানছেন না।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান।
তিনি জানান, পর্যটকদের সাগরে নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। হোটেলগুলোতেও বলে দেওয়া হয়েছে তারা যেন পর্যটকদের এ বিষয়ে বুঝান। এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টা কক্সবাজার উপকূলেথেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, শুকনা খাবারসহ নানা প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুুত করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র।’
উল্লেখ্য, ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে এবার টানা ৯ দিনের অবসরের সুযোগে দেশের প্রধান পর্যটননগরী কক্সবাজার যে লোকে- লোকারণ্য হবে, এমন ধারণা করছিলেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ঠিকই তার নমুনা দেখা দিয়েছিল ঈদের দিন থেকেই। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের পাশাপাশি আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি ঝর্ণা, পাটুয়ার টেক এর পাথরের স্তূপ, রামুর এক’শ হাত বৌদ্ধ মূর্তি, পাহাড়, নদী ও মেরিন ড্রাইভের অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ছুটে আসেন বিপুলসংখ্যক পর্যটক। ঈদের ছুটিতে পর্যটকের এ সংখ্যা বেড়েছিল কয়েক গুণ। বহু পর্যটক এখনও কক্সবাজার অবস্থান করছেন।