অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংবাদপত্রের সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ সংবাদপত্র শিল্পের সংকট কাটাতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার ও কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, প্রিন্ট মিডিয়ার সংকট কাটাতে নিউজপ্রিন্টের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্ক (ভ্যাট) প্রত্যাহার, করপোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, বিজ্ঞাপনের আয়ের ওপর উৎস কর (টিভিএস) ৪ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ করা, সরকারি বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করার দাবি জানান। তাঁরা কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো, শিক্ষার মান উন্নয়নে গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, প্রকল্পের কাজ সময়মতো না হওয়ায় জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সম্পাদকগণ মতামত দেন। অর্থমন্ত্রী সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সুপারিশ বিবেচনার কথা বলেছেন।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, করোনাকালে বিগত ১ বছর ধরে দেশের সংবাদপত্র শিল্প এক গভীর সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এ সময় জেলা ও উপজেলার সংবাদপত্র সমূহের জন্য আর্থিক সংকট ভয়াবহ হয়েছে। সংবাদপত্রের পাঠক কমে গেছে, বিজ্ঞাপন হ্রাস পেয়েছে। কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, বেতন ভাতা কমে গেছে, অনেক সংবাদপত্রের প্রকাশনা সাময়িক বন্ধ হয়েছে অথবা কলেবর কমে গেছে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে পেশাগত সততা ও কর্তব্য নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৬ জন সাংবাদিক, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৪ জন। ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মসিউর খান জানিয়েছেন, অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক এ সময়ে করোনা আক্রান্ত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরো মারাত্মক হয়ে আঘাত হানছে। এ রকম দুঃসময়ে অনেক সংবাদপত্র আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। পত্রিকার সাংবাদিক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া করোনা মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য, সহায়তা কার্যক্রমের পাশাপাশি অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করে সরকারকে সতর্ক করছে তেমনি স্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরে জনগণের করণীয় সম্পর্কে তাদের সচেতন করছে।
আমরা মনে করি জাতীয় এ দুঃসময় সরকার, জনগণ ও গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। এ জন্য সংবাদপত্রকেও শক্ত ভিত দেওয়া প্রয়োজন যাতে তারা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। সম্পাদকগণ অর্থমন্ত্রীকে যে সব সুপারিশ দিয়েছেন বিশেষ করে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার, কর্পোরেট ট্যাক্স ও উৎসে কর কমানো, বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল পরিশোধ-এসব বিষয় অর্থমন্ত্রী সংবাদপত্রের অস্তিত্বের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় নেবেন বলে আমরা আশা করি। গণমাধ্যমকর্মীগণ সহজে ও সুলভে যাতে করোনাকালীন চিকিৎসা সেবা পান, স্বাস্থ্য অধিদফতর তা নিশ্চিত করবেন আমরা তা চাই। যে সব সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দেওয়া হোক, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।
মতামত সম্পাদকীয়