সুপ্রভাত ডেস্ক :
৩ সেপ্টেম্বর, ১৯২৬। বাংলার বুকে জন্ম হল এক নক্ষত্রের। সংসারে প্রবল অনটন। তাই প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ না করেই সংসারের প্রয়োজনে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে ক্লার্কের কাজে যোগ দিতে হয়েছিল উত্তম কুমারকে। তখনই আহিরীটোলায় নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি। থিয়েটার করতে করতেই স্টুডিয়োপাড়ায় ডাক এলো। কিন্তু শিকে ছিঁড়লো না একেবারেই। বরং তকমা জুটল ‘ফ্লপ মাস্টার’। এক সময় স্টুডিয়োপাড়ায় ওই নামেই তাকে চিনত সবাই। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমা করলেও সব কটাই ফ্লপ হয়। ১৯৫৩-তে কামব্যাক ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ।
মুক্তির পর কমেডি ছবিটি নিয়ে সবার কী উল্লাস। ছবিতে নামি সব তারকা কে নেই! চারদিকে কথা হচ্ছিল, ছবিটির মাধ্যমে কী এক নতুন জুটি এসেছে পর্দায়। বয়স্করা মজেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীতে। তাদের দাবি, হিরো-হিরোইন তো তুলসী-মলিনা। নতুন জুটি তো সাইড রোলে! ছবিটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল; টানা আট সপ্তাহ চলল। তারকার ভিড়েও আলো ছড়ালেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। মিলল তাদের প্রথম রসায়নের ইঙ্গিত।
সাদাকালো ‘সাড়ে ৭৪’-এর মাধ্যমে নতুন জুটির যে ইনিংস পত্তন হয়েছিল; তাতেই হলো রঙিন ইতিহাস। উত্তম পেলেন কালজয়ী সাফল্য, সৃষ্টি করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন যুগ। তিন দশক ধরে দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে পৌঁছে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। ১৯৭০ সালের পর নায়ক উত্তম থেকে হয়ে গেলেন মহানায়ক।
যুগলবন্দি ঘরানার অন্যতম উদাহরণ। সত্যজিৎ ও উত্তম। উত্তমকুমারকে ভেবেই ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি। হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখার পর রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। এলিজাবেথ আসলে মুগ্ধ হয়েছিলেন উত্তমকুমারের অভিনয়ে।
কিন্তু এর আগে মহানায়কের জীবনে অসফলতার ধারাবাহিকতা চলছিল। এর মধ্যে সরোজ মুখার্জির ‘মর্যাদা’ ছবিতে নায়ক হলেন। তবে পরিচালকের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাম পাল্টে হলেন অরূপ কুমার। তাতেও কাজ হলো না। সহযাত্রী ছবিতে অভিনয় করছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ি সান্যালের সঙ্গে।
শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডায় পাহাড়ি সান্যাল হঠাৎ বলে বসলেন, তুমি অরুণ নও হে, তুমি যে উত্তম, উত্তম কুমার। তার পরামর্শে নাম পাল্টে হয়ে গেলেন উত্তম কুমার। নাম বদলের প্রথম ছবি সহযাত্রীতেও সাফল্য ধরা দিল না। ১৯৫১ সালে ‘সঞ্জীবনী’ও ফ্লপ হলো। ‘বসু পরিবার’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় নয়, ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে। ছবিটি বেশ ভালো চলল, অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রশংসিত হলেন উত্তম।
অনাবিল হাসি, অকৃত্রিম চাহনি আর অভিনয় গুণে কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে আজও বাঙালির চেতনায় উত্তম জীবন্ত। ১৯৬১ সালে ‘সপ্তপদী’ সিনেমায় উত্তম তার ভালোবাসার মানুষ রিনা ব্রাউনকে (সুচিত্রা সেন) নিয়ে বাইকে চেপে গেয়েছিলেন, এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো। পথ শেষ হয়নি, মৃত্যুর পরও চিরসবুজ পথে হেঁটে চলেছেন বাঙালির প্রাণের নায়ক। প্রতিটি ক্ষণে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
বিনোদন