নালায় পড়ে প্রাণ হারাল আরেকটি শিশু। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা বক্স ড্রেনের ঢাকনা (স্ল্যাব) খোলা থাকায় শিশুটি খেলতে গিয়ে অসাবধানবশত খালে পড়ে যায়। দুদিন আগে ড্রেনের ওপর থেকে ঢাকনাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছিল। নিহত শিশু সাইদুলের বোন আঁখি আক্তার মিম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাইদুল বাসা থেকে বের হয়েছিল। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় রাতে তার মা, নানি ও আশপাশের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেছিল। সকালে নালায় তার লাশ পাওয়া যায়।
নগরীর বন্দর থানাধীন গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের আবিদারপাড়া এলাকার নাসির খাল থেকে সাইদুল ইসলাম শহীদুল (৮) নামে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। রবিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মৃত সাইদুল বিল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আলী আকবরের ছেলে। সে আগ্রাবাদ শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার মা নাছিমা আক্তার বাক্প্রতিবন্ধী।
এ নিয়ে গত সাত বছরে অরক্ষিত ড্রেন ও খালে পড়ে চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ চার জন মারা যায়। ওই বছর ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে খালে পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর এলাকায় চশমা খালে পড়ে মারা যায় কামাল উদ্দিন নামে এক শিশু। নিখোঁজের তিন দিন পর তার লাশ উদ্ধার হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ মোড়ে ড্রেনে পড়ে মারা যান আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া । ৩০ জুন ষোলশহরের চশমা খালে পড়ে তিন অটোরিকশা আরোহী নিখোঁজ হন। পরে চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ বছরও এ পর্যন্ত ড্রেনে পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ মে আছদগঞ্জ শুঁটকি পল্লী এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যান ২৭ বছর বয়সী তরুণ আজিজুল হাকিম ইমন। একই দিন চান্দগাঁও থানার একটি ড্রেনে পড়ে যায় ১২ বছরের শিশু মনির হোসেন। একদিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায়।
সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘স্থানীয়রা যে ধারণা করছেন সেটি সঠিক নয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ৫–৬টা স্ল্যাব তুলে নেওয়া হয়। শিশুটি কিন্তু নিখোঁজ হয়েছে বিকাল ৫টার দিকে। আর আমাদের স্ল্যাব তোলা হয়েছে রাত ৮টার দিকে। তাহলে শিশুটির স্ল্যাবের অংশে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের সম্ভাবনা মোটামুটি নেই বললেও চলে।’
যে যাই বলুক অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে মানুষের মৃত্যু তো হচ্ছে। এবং সে মৃত্যুর তালিকা দিনদিন বড়ই হচ্ছে। এখন এসব মৃত্যুর দায় নেবে কে? সিটি করপোরেশন নাকি সিডিএ? অরক্ষিত স্থানে অন্তত বাঁশ দিয়ে হলেও তো সামান্য সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। তার জন্য আলাদা প্রকল্প করার প্রয়োজন হবে না নিশ্চয়ই।