সুপ্রভাত ডেস্ক »
নিত্যপণ্য বিক্রিতে অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টা রুখে দিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এই নজরদারি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও করা হবে। প্রয়োজনে শাস্তির বিধান করা হবে।
ব্রয়লার মুরগি এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলো মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা কমানোর ঘোষণার বিষয়টি ইঙ্গিত করে শনিবার ঢাকার মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে একথা বলেন তিনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
যারা তারপরও দাম বাড়াচ্ছে, তাদেরকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং প্রয়োজনে শাস্তির বিধান রাখা হবে।’ খবর বিডিনিউজ।
রোজার চাহিদা বাড়ে, এমন পণ্যের দাম নিয়ে এই মাসের আগে আগে আলোচনা থাকে ব্যাপক। সাধারণ একটি ধারণা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা এই সময়ে দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করেন।
চলতি বছর আমদানি পণ্যের দাম এমনিতে বেশি। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, আমদানি এবং দেশের ভেতরে পরিবহন খরচবৃদ্ধিসহ নানা কারণে দাম বাড়ার আলোচনা যেমন আছে, তেমনি দেশে উৎপাদন হয়, এমন বেশ কিছু পণ্যের দামও বেড়েছে।
বিশেষ করে এবার ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রবল। কেজিপ্রতি দাম আড়াই শ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা তদারকি শুরু করে। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রক বড় কোম্পানির পক্ষ থেকে কেজিপ্রতি দাম ৪০ টাকা কমানোর ঘোষণা আসে। অবশ্য এখনও এই ঘোষণার প্রভাব বাজারে পড়েনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বড় কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এসএমএসে বাজারদর নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ মিলেছে। খামারিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দাম বাড়িয়ে এক মাসে প্রায় হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে কয়েকটি কোম্পানি।
খামারিদের সংগঠন বলছে, কেজিপ্রতি দাম ৪০ টাকা করে কমানোর ঘোষণাতেই প্রমাণ হয়েছে, ‘অতিরিক্ত মুনাফা’ করা হয়েছে এই কদিন। অবশ্য এই ‘অতিরিক্তি মুনাফা’ করার জন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।
মন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, রমজান আসলে কিংবা কোনো উৎসব আসলে আমাদের দেশের কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন পূজা পার্বনের সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, বাড়ানোর অপচেষ্টা চালায়।
‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছে এটা আপনারা দেখেছেন। বাজারে মনিটর করা হচ্ছে। এটি খুব সহসা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করা হবে।’
‘মজুদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি’
তথ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রমজানে খাদ্যপণ্যের মজুদ কেবল যথেষ্ট নয় বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের খাদ্য নীতিতে বলা আছে দেশে যদি ১০ লাখ টন খাদ্যপণ্য মজুদ থাকে তাহলে সেটি নিরাপদ, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মোটামুটি যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে ২০ লাখ টনের চেয়ে বেশি খাদ্য শস্য চাল এবং গম গুদামে মজুদ রয়েছে। ভোগ্যপণ্যেরও যথেষ্ট মজুদ রয়েছে।’
কেউ যেন সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে, সে জন্য গণমাধ্যমকেও ‘ভূমিকা রাখার’ আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রিপোর্টিং হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিতে পারবে না।’
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে পণ্যমূল্য বাড়ার পাশাপাশি সরবরাহ সংকট বাড়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন হাছান। বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো পণ্যের সংকট তৈরি হয়নি।’
বিএনপির কর্মসূচি ‘রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করতে’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রমজান মাসে অতীতে আন্দোলনের ঘোষণা আমরা কখনও দেখি নাই। কারণ, সবাই রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।
‘বিএনপির কর্মসূচি দেখে মনে হচ্ছে তারা রমজানের পবিত্রতাটাও নষ্ট করতে চায়। তারা মানুষকে স্বস্তি দিতে চায় না, এটি অনভিপ্রেত।’