বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের শিখরে সফল আরোহণকারীদের তালিকায় এগারো বছর পর আরেকজন বাংলাদেশি হিসেবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন চট্টগ্রামের বাবর আলী। ১৯ মে রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি ‘সামিট’ করেছেন। তার এই সামিটের অর্থের বড় একটি অংশ এসেছে ‘ক্রাউডফান্ডিং’ এর মাধ্যমে। রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফারহান জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এভাবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বতের ২৯ হাজার ৩১ ফুট শিখরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো ষষ্ঠ ব্যক্তি হলেন তিনি।
আন্তরিক অভিনন্দন জানাই বাবর আলীকে।
পেশায় চিকিৎসক বাবর আলীর নেশা পর্বতারোহণ। তিনি ২০১৪ সাল থেকে হিমালয় রেঞ্জের ১১টি উচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তার মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। ২৬ এপ্রিল বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে এভারেস্ট ক্যাম্প-২ এ পৌঁছালেও, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ফিরে আসেন তিনি। তারপর এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার মতো উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাবর আলীকে। শেষ পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয় গত ১৪ মে। এদিন তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান। বাবর আলী ১৯ মে ভোরে ডেথ জোন নামে পরিচিত শৃঙ্গে আরোহণ করেন এবং মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। এখন এভারেস্টের সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও জয় করার জন্য যাত্রা শুরু করেছেন।
শুরুর আগে বাবর আলী জানান, বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারও পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। কিন্তু এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর একই সঙ্গে আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই নিলাম। অর্থাৎ একই অভিযানে মাউন্ট এভারেস্ট ও চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়ায় উঠব।’
৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বাবর আলীর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে এভারেস্ট জয় করেছেন মুসা ইব্রাহীম, এম. এ. মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাসরিন ও মো. খালেদ হোসাইন। এঁদের মধ্যে খালেদ হোসাইন এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে নিখোঁজ হন।
এভারেস্টে আরোহণ বেশ ব্যয়বহুল এবং এজন্য মাসের পর মাস যে শারীরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তাতেও প্রচুর টাকা খরচ হতে পারে। বাবর আলীর শুধুমাত্র পর্বতারোহণ অভিযানে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার মতো। যার একটি বড় পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমে। ক্রাউডফান্ডিং হল কোন একটি কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য বা তহবিল গঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি উপায়। অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক এবং বাবর আলীর বিভিন্ন পর্বতারোহণের সঙ্গী ফারহান জামান জানান, বাংলাদেশে বাবর আলীই প্রথম যিনি ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে এভারেস্ট জয় করেছেন।
আশা করি বাবর আলী তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেই দেশে ফিরবেন। তিনি নিরাপদে ফিরে আসুন সে প্রত্যাশা করি। তাঁর সাফল্য দেশের লাখো তরুণের মনে আশাবাদ তৈরি করবে তারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য তৈরি হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ