অভিনন্দন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেটদল

রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম কোনও টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। ছবি: এপি’র সৌজন্যে

বিদেশের মাটিতে এমনিতে জয়ের খুব বেশি নজির নেই বাংলাদেশের। ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জেতা একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন ক্রিকেটপাগল বাঙালিরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেরা সাফল্য ছিল বড় জোর ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

২০০৩ সালের স্মৃতি এখনো অনেকের কাছে অমলিন। মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন টেস্টে সবে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের। সেবার পাকিস্তানকে রক্ষা করেন ইনজামাম উল হক। ১ উইকেটে হেরেছিলেন হাবিবুল বাশার-খালেদ মাহমুদরা। ২১ বছর পর এবার ক্রিকেটে প্রথমবার পাকিস্তান জয় করলেন মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসান-মেহেদী মিরাজরা। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে মুলতানে সেই মুহূর্ত তৈরি হলেও দীর্ঘশ্বাস নিয়েই লাল-সবুজরা মাঠ ছেড়েছে! ২০২৪ সালে এসে হলো অসাধ্য সাধন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম কোনও টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়লো শান্তর দল।

ঐতিহাসিক এ জয়কে দলীয় প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বিজয়োত্তর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘পুরোটা দলীয় প্রচেষ্টা। মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা অসাধারণ ছিল। আমাদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে দেখলে দেখবেন ব্যাটিং–বোলিং, এমনকি ফিল্ডিং দেখলেও দেখবেন দলীয় প্রচেষ্টা। অধিনায়ক হিসেবে সব সময় আমার এটিই চাওয়া, যেন দল হিসেবে খেলি। হয়তো সব সময় ফল ভালো হবে না। এ ম্যাচে প্রতিটি দিকই কাভার করেছি আমরা। খুবই ভালো লাগছে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে পাওয়া জয়ের ম্যাচের শেষ দিনে সাকিব নেন ৩ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সাকিবের বোলিং-ই কার্যত দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিয়েছে। ১৪৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে ৩০ রানের লক্ষ্য দিতে পারে পাকিস্তান। যেটি কোনো উইকেট না হারিয়েই ছুঁয়ে ফেলে নাজমুলের দল।

সাকিবের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বললেন, ‘যতটুকু বুঝি, (সাকিব) যখন দেশের হয়ে নামেন, তখন অনেক নিবেদিত একজন মানুষ তিনি। দলের জয়ের জন্য যা যা করা দরকার—ব্যক্তিগত জীবন একদিকে সরিয়ে রেখে দলের জন্য কীভাবে ভালো করতে পারেন, সেদিকে ফোকাস করা, দলের জুনিয়র একজনকে আলাদা করে সহায়তা করা—এগুলো আলাদা করে করতে পারেন।’
বাংলাদেশের জাতীয় দলকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। এই বিজয়টি এমন সময়ে আসলো যখন দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং বর্তমানে দেশের বিশাল একটি অংশ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণকাজে অংশ নিচ্ছেন আপামর জনতা। এমন বিপর্যয়ের দিনে জাতীয় দলের এই বীরোচিত বিজয়ে বিপদাপন্ন মানুষ একটু সাহস ও প্রেরণা পাচ্ছে। এটা বিজয়ের আনন্দের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়।