শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে বর্তমান প্রজন্মকে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে চায়। কিন্তু একটি মহল বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। অবৈধ পথে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। এর বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে এবং যেকোনো মূল্যে এ ধরনের চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রহমতুল্লাহ চৌধুরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনোপলক্ষে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর বেসিক সমন্বয় পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
তিনি আরো বলেন, তারা এখনো এদেশে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। অথচ পাকিস্তান দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। একথা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। সেখানে মসজিদে, স্কুলে এমনকি হাসপাতালেও জঙ্গীরা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাচ্ছে। এরকম ঘটনায় প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল চলছে।
তিনি বর্তমান সরকারকে শ্রমিকবান্ধব সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা ছিল শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের প্রতি। তিনি যখন ৬৬ সালে ছয়দফা ঘোষণা করেন ঐ বছর ৭ জুন ঢাকায় আন্দোলনে প্রথম ছয়দফার পক্ষে রক্ত দিয়েছিলেন আদমজির শ্রমিক মনু মিয়া। বঙ্গবন্ধু জানতেন শ্রমিক শ্রেণি তার লড়াই সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার। তাই ছয়দফা ঘোষণার পর পরই তিনি শ্রমিক লীগ গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু যেমন শ্রমিক দরদী তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনাও শ্রমিক দরদী। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদেরকে রাজপথে জোরদার আন্দোলনে নামতে হয়নি। তবে এটাও বাস্তবতা যে, শ্রমিক সমাজের পরিপূর্ণ মুক্তি আসেনি। এজন্য শ্রমিক নেতৃত্বকে পরিশীলিত ও আপসহীন হতে হবে।
তিনি শ্রমিক নেতা রহমতুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বলেন, আমি তাকে দাদা বলে ডাকতাম। তার সাথে শ্রমিক লীগ সংগঠনের জন্য অনেক জেলায় জেলায় ঘুরেছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী এবং আপসহীন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। রহমতুল্লাহ চৌধুরী একদিনে রহমতুল্লাহ চৌধুরী হয়ে উঠেননি। একইভাবে জহুর আহমদ চৌধুরী, এম এ আজিজ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী একদিনে গড়ে উঠেননি। তাই আমাদেরকে এদের মতই প্রকৃত রাজনীতিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, বাঙালির ইতিহাস শ্রমিক শ্রেণির আত্মত্যাগের ইতিহাস। স্বাধীনতার জন্য শ্রমিক শ্রেণির রক্তদানের ইতিহাস। মনু মিয়া ছয় দফা আন্দোলনে প্রথম শহীদ। তিনি একজন মেহনতি শ্রমিক ছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও দর্শন হলো শোষিতের পক্ষে।
তিনি রহতুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বলেন, আমরা তার কাছে রাজনীতি শিখেছি। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন জীবনে কখনো নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি। সভায় প্রধান বক্তা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বাঙালি আত্মবিস্মৃতিশীল। এ কারণে আমরা অনেক সময় স্মৃতি হারিয়ে ফেলি। যারা প্রবীণ রাজনীতিক ছিলেন আমরা তাদেরও ভুলতে বসেছি। কিন্তু তাদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের কাছে শেখা ও জানার মানসিকতা অর্জন করতে হবে।
জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগর বেসিক ইউনিয়ন সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মো. ইয়াকুবের সভাপতিত্বে, মীর হোসেন মিলনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি সফর আলী, শ্রমবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য মো. সিরাজ উল্লাহ, মহিলা শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুবা আহসান চৌধুরী, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনামুল হক চৌধুরী, শ্রমবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য মো. সিরাজ উল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, পাহাড়তলী আঞ্চলিক জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শফি বাঙালি, লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম, মো. নুরুল আলম লেদু, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. নাসির উদ্দীন পলাশ, মো. তাজুল ইসলাম, সাদেকুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, মীর মো. নওশাদ, রহমতুল্লাহ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ চৌধুরী ভাস্কর, মো. কামাল উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সকালে মরহুমের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয় এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তি