অবৈধ দখলমুক্ত হোক নগরের খাল

জামালখান খালের জায়গায় উভয় পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা আবার ভাঙা শুরু হয়েছে। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খালটির জামালখান এবং আবেদিন কলোনি এলাকার একাধিক ভবনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সিডিএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালের জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়ার পর জামালখান এলাকার তিনটি বিল্ডিংয়ের মালিক পক্ষ নিজেদের উদ্যোগে ভাঙার কাজ শুরু করেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন সুপ্রভাতকে জানান, লাভলেন স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশ থেকে জামালখান এবং সিরাজউদ্দৌলা রোড হয়ে চাক্তাই খালে যুক্ত হওয়া দুই কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্য জামালখান খাল। সেখানে খালের জায়গা দখল করে ভবন মালিকরা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। খাল দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
খাল দখলমুক্ত করে নগরের জলাবদ্ধতা দূর করার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কাজটি চলছিল ধীরগতিতে। তা নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে খাল দখলমুক্ত করার বর্তমান প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
নগরের কয়টি খাল আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান একেক সংস্থার কাছে একেক ধরনের। চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য মতে নগরীতে ৩৬টি খাল আছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তথ্য মতে আছে ৫৭টি খাল। সিডিএর মেগা প্রকল্পেও ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বলা হয়েছে ৫৬টি খালের কথা ।
বিভিন্ন রেকর্ডে চট্টগ্রাম নগরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১১৮টি খালের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তত ৫০টি খালের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। চট্টগ্রাম নগর থেকে পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে মূলত ১০টি খাল দিয়ে। এগুলো হলো চাক্তাই খাল, রাজা খাল, বিবি মরিয়ম খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, বাকলিয়া খাল, মহেশ খাল, বোট ক্লাব খাল ও ডোমখালী খাল।
তিন-চার দশক আগে চাক্তাই খালকে বলা হতো চট্টগ্রামের দুঃখ। একে পুঁজি করে অনেক আন্দোলন -সংগ্রাম হয়েছে, অনেক রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর দুঃখ এখনও ঘোচেনি। এরমধ্যে জলাবদ্ধতা প্রকল্প নাগরিকদের মনে আশা জাগিয়ে তুললেও কাজের ধীরগতির কারণে অনেকে হতাশ হয়েছেন। তবে কিছু কিছু খালে কাজ হয়েছে। দখলমুক্ত করে খালের পাশে ওয়াকওয়ে ও সার্ভিস লেন করা হচ্ছে। এতে কয়েকধরনের সুবিধা হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমনভাবে খাল দখল করে বিল্ডিং করা হয়েছে যে, খালে যাওয়া ও খাল পরিষ্কার করার উপায়ও কোথাও রাখেনি। এখন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করলে খাল দখল করা বা খাল ঘেঁষে স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হবে না। এ ব্যবস্থা করে রাখলে খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা, খালের আবর্জনা সরানোর পথও সহজ হয়ে উঠবে। কাজেই আমরা সিডিএ-র এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলতে চাই এই অভিযান যেন কোনো অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে না যায়।