ভূঁইয়া নজরুল »
১৫১ বছরের পুরনো বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজে নির্মিত হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম কলেজ দেশের দ্বিতীয় পুরনো কলেজ। চট্টগ্রামের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক নির্মিত হলেও প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠে এতোদিন নির্মিত হয়নি। অবশেষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শিক্ষকদের উদ্যোগে ও অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এই স্মারক।
চট্টগ্রাম কলেজে সবসময় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য থাকলেও ১৯৮১ সালের ২১ অক্টোবর সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা তবারককে ক্যাম্পাসে এনে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে কলেজে আধিপত্য কায়েম করে ইসলামী ছাত্র শিবির। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালেও ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাদাতকে হত্যা করে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এস এম শফিউল আজম। ১৯৮০-৮১ সালে ভিপি থাকা এস এম শফিউল আজম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম কলেজে শিবিরের কার্যক্রম বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালের পর থেকে তা বেড়ে গিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরে শিবির পুরোপুরি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। এবিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে জামায়াত শিবিরকে বিদায় করে। আর এর মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একইসাথে কলেজ ক্যাম্পাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল নির্মাণেরও দাবি জানিয়ে আসছিলাম। চট্টগ্রামের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকলেও দেশের প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো মুর্যাল নেই।’
এদিকে এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম কলেজের প্রবেশ মুখে একটি মুর্যাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটিকে পুরোপুরি মুর্যাল বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন কলেজটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কলেজের শিক্ষকগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সম্বলিত কিছু করতে চেয়েছেন। এজন্য কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তা অনুমোদনও নেয়া হয়েছে। তা নির্মাণ করতে যা প্রয়োজন সবই কলেজের শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।’
তিনি বলেন, সেই আলোকে প্রথমে কিছু রড কিনে এনে কলেজের সামনে রেখে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে বাকি শিক্ষকদের কেউ ইট, কেউবা বালি আবার কেউবা সিমেন্ট সরবরাহ করছে। আর এভাবেই গড়ে উঠছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক।
মুর্যাল না বলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক নির্মিত হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাঝখানে থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক। এর একপাশে থাকবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার যুদ্ধের চিত্র এবং অপর পাশে থাকবে ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যা, বিজয় উল্লাস এবং দেশের কৃষকদের চিত্র। আর এক প্রান্তে থাকবে কলম। যেহেতু এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাই একটি বইয়ের মতো দুই পাশে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট থাকছে।
চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারের পাশে কলেজ ভবনে প্রবেশ করতে গেলেই তা চোখে পড়বে। চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর শেখর দস্তিদারের সময়ে কলেজের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছিল। আর এখন এই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক নির্মাণের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পাচ্ছে। স্মারক নির্মাণের জন্য স্বেচ্ছায় অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে যা পারি তা দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মারক নির্মাণ করবো। ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরাও যার যা সামর্থ্য রয়েছে তা দিয়ে অংশ নিচ্ছে।’
কলেজের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমনো অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। কলেজের প্রায় ২০০ শিক্ষকের সকলের অংশগ্রহণে নির্মিত হচ্ছে এই স্মারক। তবে তা নির্মাণ করতে বাজেট কতো ধরা হয়েছে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী তা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘কোনো বাজেট নেই। যখন যা প্রয়োজন তা সকলে দিয়ে দিচ্ছে। এই কলেজে ২০২১ সালে কর্মরত সকল শিক্ষকদের সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে এই স্মারক।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কলেজের পাশে মহসিন কলেজে গত দুই বছর আগে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল নির্মিত হয়েছে। এছাড়া সরকারি কমার্স কলেজসহ অনেক কলেজেও রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল।