অনিয়ম কাটিয়ে একবছরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে জেমিসন হাসপাতাল

সংবাদ সম্মেলনে পেয়ারুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক »
জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল ১৩ বছরে আনুমানিক ৪৮ কোটি টাকা দুর্নীতিসহ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। কিন্তু নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা অনিয়ম কাটিয়ে এক বছরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এ হাসপাতাল।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেমিসন হাসপাতালের মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, লুটপাটের আখড়ায় পরিণত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করা হয়েছে এবং এক বছরের ব্যবধানে এটার ৪ কোটি টাকা বাড়তি আয় হয়েছে। বর্তমান নির্বাহী পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত এক বছরে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে আয় গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১১ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল সাত কোটি টাকা। বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছরে বহু সংস্কারকাজ করার পরও আমরা গত বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকা বেশি আয় করেছি।’
হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণের কাছে হাসপাতালের পূর্বের ইমেজ ফিরিয়ে এনে রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বর্তমান বছরে ৬০ শতাংশ বাড়াতে সমর্থ হয়েছি। বর্তমানে হাসপাতালটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ায় আগামী বছর ১৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে আমাদের বিশ^াস। সনদ জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ও অন্যান্য অনিয়মে যুক্ত ৮ জন কর্মচারীকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনের আলোকে কার্যনির্বাহী পরিষদ কর্তৃক চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’
পেয়ারুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতি মাসে ৫৫ লাখ টাকা আয় হলেও বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই আয় মাসে এখন ১ কোটি ৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল। আগের কমিটির সেই ৮ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও সঠিকভাবে জমা হচ্ছে। যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের পাওনা যথাযথাভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে। যা অতীতে ফান্ড সংকটের কারণে করা হতো না। ’
ব্যয় কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাহী পরিষদ সদস্যরা কোন সম্মানী গ্রহণ করছেন না। রেড ক্রিসেন্ট থেকে চেয়ারম্যানের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। আমার নামে বরাদ্দ থাকা গাড়িটি নিজে ব্যবহার না করে হাসপাতালের ডাক্তারদের আনা নেওয়াসহ হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গাড়ির নামে অপচয় রোধ করে বিগত ২০২৩ সালে প্রায় ১৫ লাখের বেশি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। নবজাতকদের চিকিৎসায় একটা অত্যাধুনিক এনআইসিইউ বিভাগ চালু করে এতে ফটোথেরাফি, বেবী ওয়ার্মার মেশিন নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগের জন্য প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ৪ডি কালার মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। প্যাথলজি বিভাগে অত্যাধুনিক অলিম্পাস মাইক্রোস্কোপ সংযোজন করা হয়েছে। জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উন্নীতকরণে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ‘নার্সিং ল্যাব’ নির্মাণ করা হয়েছে।’
বিভিন্ন রক্ষণাবেক্ষণের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতর প্লাস্টিক পেইন্ট ও বাইরে ওয়েদার কোট রঙের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়া সময় হাসপাতাল ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। ওটি ও লেবার রুম, যা প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল তা ঠিক করেছি। সেইফটি ট্যাংক ও ওয়াটার রিজার্ভার পরিষ্কার করা হয়েছে, যা গত ২০ বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি। সকল অব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে রেড ক্রিসেন্ট জেলা নির্বাহী পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করেছি।’
১৩ বছরে হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে পেয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ বছর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রতি বছর ৩০ লাখ টাকায় বেড শিট, দরজা-জানলার পর্দা, ফোম-মেট্রেস ক্রয় করেছে। অথচ গত এক বছরে এসব জিনিসপত্র কেনা হয়েছে মাত্র তিন লাখ টাকায়। বিগত পরিষদ লাখ লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনলেও কখনও যাচাই বাছাই করেনি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর বেড শিট, পর্দা কেনার ভাউচারগুলো যাচাই করি। ভাউচারে থাকা দোকানের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। হিসেব করে দেখেছি বিগত বছরগুলোতে একটি বেড শিট-পর্দার দাম ১৯ হাজার টাকার মতো পড়েছে। ওই সময়ে দায়িত্বে থেকে লুটপাট করা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ সময় জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ, নির্বাহী সদস্য রাইসুল ইসলাম চৌধুরী এমিল, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, শহীদুল ইসলাম পিন্টু, সুগ্রীব মজুমদার দোলন, ইসমাইল হক চৌধুরী ফয়সাল, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী রুমেল, চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. রোজী দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।