নিজস্ব প্রতিবেদক »
চলতি মাসের ২১ তারিখ শরীরে একজিমা (চর্মরোগ) দেখা দেওয়ায় ৫ টাকায় সেবা নিতে আগ্রাবাদ কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (আমেরিকান হাসপাতাল) যান আয়েশা বেগম। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। ওই চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে তাকে স্থানীয় ফার্মেসি ও ল্যাবে পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু বাসায় ওষুধ এনে দামের স্টিকার ঘষে ৭০০ টাকা ওষুধের জায়গায় প্রকৃত দাম দেখতে পান ২৫০ টাকা। এভাবে প্রতিনিয়ত রোগীদের হয়রানি করছে হাসপাতালের নিকটবর্তী স্থানীয় ফার্মেসিগুলো। অভিযুক্ত ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম।
গতকাল সোমবার সকালে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মা ফার্মেসি, মা মেডিকেয়ার এবং স্বাগতা ফার্মেসি থেকে ৬ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ করা হয়। প্রত্যেক ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চিকিৎসা নেওয়া আয়েশা বেগম বলেন, ‘সবার কাছ থেকে শুনেছি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা উন্নত। বিদেশি চিকিৎসক এসে চিকিৎসা দেন। তার জন্য সেখানে গিয়েছি। কিন্ত চিকিৎসক এক মিনিট দেখলেন না। কাছের ফামের্সি থেকে ওষুধ এনে দেখি দামের লোগো ঘষলেই উঠে যাচ্ছে। ওষুধটি ৭০০ টাকা দিয়ে কিনে আনলাম। স্টিকার ঘষে তার দাম লেখা ২৫০ টাকা। শুধু তাই নয় হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ বিনামূল্যে দেয় না। এভাবে গরিব রোগীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’
অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসির মালিক বলেন, হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা এই অনিবন্ধিত ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। রোগীদের তারাই বলে দেন, এই ওষুধ শুধুমাত্র স্থানীয় ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। প্রতিটি বিদেশি ক্রিমের দাম এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। বিক্রিত ওই ক্রিম থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কমিশন পান চিকিৎসকরা। এছাড়া সকল রোগীদের পরীক্ষা করতে মেডিলিভ ল্যাবে পাঠায়। সব রোগী ওখানেই পরীক্ষা করে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেডিলিভ ল্যাবটি অনিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান।
অভিযান নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘কোনো সেবা প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে অসাধু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীন বলেন, ‘এ ওষুধগুলো ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর নিবন্ধিত নয়। এগুলো কোন ফার্মেসিতে বিক্রি করা যাবে না এবং কোন ডাক্তার এগুলো প্রেসক্রিপশন করতে পারবে না। কিন্তু এই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা কেন প্রেসক্রিপশন করছেন সেটি আমি বলতে পারব না।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. সুমন বড়–য়া বলেন, ‘ওই হাসপাতালে অনিবন্ধিত ওষুধের প্রেসক্রিপশন লেখায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা যদি পরবর্তীতে এমন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’