বৃহস্পতিবার রাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দমবন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে মোহাম্মদিয়া প্লাজার ব্রাদার্স টেলিকম নামে একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন দ্রুত পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় ওই মার্কেটে রাতে অবস্থান করা প্রায় মানুষ আগের দিন বাড়িতে চলে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা কম হয়েছে। তিনজন আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান।
আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, পাশাপাশি দুটি মার্কেট। ঢোকার রাস্তা সেভাবে নেই, একেবারেই অপ্রশস্ত। এজন্য আমাদের কাজ করতে খুব সমস্যা হয়েছে। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আসলে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে নগরের সর্বত্র। মার্কেট থেকে বাসাবাড়ি কোথাও আগুন নেভানোর মতো সুযোগ নেই, ব্যবস্থা নেই। একবার আগুন লাগলেই কেবল বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ফায়ার সার্ভিস থেকে সিডিএ, সিডিএ থেকে সিটি করপোরেশন অনেক বড় বড় বুলি ছাড়তে থাকবে।
আইনে অগ্নি নির্বাপণে তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। প্রথম স্তরের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক ৫৫০ বর্গফুটের জন্য একটি করে ফায়ার এক্সটিংগুইসার (অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র) রাখতে হবে। এটির ওজন ৫ কেজির কম নয় আবার ৮ কেজির বেশি নয়। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে প্রতি ১০ হাজার বর্গফুটে একটি করে হোস রিলস (পানি চলাচলের পাইপ) এবং তৃতীয় স্তরে রয়েছে একটি হাইডেন কাম রাইজার, একটি ডিজেল চালিত পাম্প ও পানির চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জোকি মেশিন থাকতে হবে। অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বিধি মানা হলেও ব্যয় সংকোচনের জন্য মানা হচ্ছে না তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বিধি। অথচ এটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের তালিকায় অগ্নিকাণ্ডের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। এই বাজারে ১০ হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। অগ্নিঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য মার্কেটগুলো হচ্ছে খাতুনগঞ্জ, জহুর মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমন্ডি লেন, গোলাম রসুল মার্কেট, বাগদাদ ইলেকট্রিক সুপার মার্কেট, হাজি সরু মিয়া মার্কেট, নূপুর মার্কেট, সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, পোর্ট মার্কেট, বড় পুল বাজার, ইসা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকিরহাট মার্কেট, নয়াবাজার মার্কেট, ফইল্যাতলি বাজার, চৌধুরী মার্কেট, মহাজন টাওয়ার, চকভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল, গুলজার মার্কেট, আলী মার্কেট, মতি টাওয়ার, শাহেন শাহ মার্কেট, হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার সুপার মার্কেট, নজু মিয়া হাট মার্কেট, বলির হাট মার্কেট, ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান পুরোনো জুট মার্কেট ও ওমর আলী মার্কেট, শেখ ফরিদ মার্কেট, যমুনা সুপার মার্কেট, ষোলশহর সুপার মার্কেট, ইমাম শপিং কমপ্লেক্স এবং চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাকের মতে, এই মার্কেটগুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। বিশেষ করে রিয়াজউদ্দিন বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ এখানে একটি মার্কেটের সাথে আরেকটি মার্কেটে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। দুইশো মার্কেটই মনে হয় এক ছাদের নিচে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একসাথে কাজ না করলে এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড থেকে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
আসলে সারা শহরই অগ্নিঝুঁকিতে, বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, আবাসিক ভবন কোথাও অগ্নিনির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও কেউ সেসবের ভ্রুক্ষেপও করে না। আমলে নেওয়ার জন্য আরও কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে হবে তা নগরবাসী জানেন না।
এ মুহূর্তের সংবাদ