শুভ্রজিৎ বড়ুয়া #
নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় অতি প্রয়োজনীয় হলো অক্সিজেন। কেননা এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা আক্রান্তদের ফুসফুসে পানি জমায়। ফলে শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয়। এমন সময়ে অন্য যেকোন ওষুধের চেয়ে অক্সিজেন সেবা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বলে জানা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। করোনা মহামারিতে দেশে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিতে আবুল খায়ের গ্রুপ তাদের অক্সিজেন প্ল্যান্ট উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
সরেজমিনে সীতাকু- উপজেলার শীতলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আবুল খায়ের স্টিল মিল ঘুরে জানা যায়, লিন্দে গ্রুপ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি জার্মানির একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। যা পৃথিবীর ১১০ টির বেশি দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। আবুল খায়ের গ্রুপ লিন্দে বাংলাদেশের মাধ্যমে ২০১২ সালে এ প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালে এ প্ল্যান্টের উৎপাদন শুরু হয়। মূলত ইস্পাত উৎপাদনের কাজে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও কার্বনের প্রয়োজন হয়। তাই তারা এ প্ল্যান্টটি স্থাপন করেছেন। এ প্ল্যান্টের উৎপাদিত গ্যাস তাদের নিজস্ব কাজে ব্যবহৃত হতো। এ প্ল্যান্ট থেকে দৈনিক ২৬০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব। সুতরাং, এটি দেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট।
আবুল খায়েরের এই অক্সিজেন প্ল্যান্টের সহকারি মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহার কাছে এ প্ল্যান্ট সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্ল্যান্ট দৈনিক ২৬০ টন অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব। আমরা এটি মূলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহার করতাম। ইন্ডাস্টিয়াল অক্সিজেন ও মেডিক্যাল অক্সিজেনের প্রসেসিং একরকম নয়। তাই আমরা গত কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের প্ল্যান্টে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য কিছু ইকুপমেন্ট নিয়ে আসি। পাশাপাশি বাইরে থেকে অক্সিজেনের জন্য ৩০০ পিস সিলিন্ডার ইমপোর্ট করি।’
করোনা সংকট পরবর্তীতে এ অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিয়ে বাণিজ্যিক কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিয়ে আমাদের বাণিজ্যিক কোনো পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাম হল লিন্দে বাংলাদেশ। তারা তাদের সমস্ত ইকুপমেন্টসহ কারিগরি সহায়তা নেয় লিন্দে ভারত থেকে। বর্ডার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে একটি সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে আমাদের ডিএমডি (ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর) মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। করোনা সংকট শেষ হয়ে গেলে আমরা মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিব।’
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার ও ইনচার্জ মো ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের এই প্ল্যান্টটি মূলত নিজস্ব উৎপাদন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দেশের এরকম একটি সংকট দেখে আমরা বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ সেবা প্রদান করার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আমরা আজকে (মঙ্গলবার) বিআইটিআইডিতে দশটি সিলিন্ডার প্রদানের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এসেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা দেশের সকল করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে আমাদের সিলিন্ডার পৌঁছে দেব। এর আগে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সকল করোনা রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। করোনা সংকট যতদিন থাকে, ততদিন পর্যন্ত যে কেউ আমাদেরকে তাদের সিলিন্ডার পাঠিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন রিফিল করতে পারবেন।’