আওয়ামী লীগ ২০৪০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে

চট্টগ্রামে শেখ ফজলুল করিম সেলিম

সম্মেলন ঘিরে যানজট, দুর্ভোগে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ২০৪০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দোসররা ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগকে টেনে হিচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করছে। তারা যতই টানছে, ততই আমাদের ভিত শক্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মচকে যাবে, ভাঙবে না।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাস্তা বন্ধ ও বিভিন্ন রাস্তায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে নগরজুড়ে যানজট দুর্ভোগ হয়েছে এবং দুর্ভোগের স্বীকার হয়েছে নগরবাসী।

গতকাল সোমবার দুপুরে নগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। আগামী নির্বাচন সংবিধান মেনে হবে জানিয়ে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইউরোপের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে। ইয়াজুুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কোনটাই হবে না। দেশে কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। করলে তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোরা নির্বাচনে আসলে আসবি, না আসলে না আসবি। নির্বাচন না করলে বিএনপির অস্তিত্ব ন্যাপের মতো হবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে ভাসানির নেতৃত্বে ন্যাপ সরে গিয়েছিল।

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা নয় ইউরোপ হবে দাবি করে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কেবল পদ্মা সেতুর কারণেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশ বেড়ে যাবে।

উদ্বোধকের বক্তব্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মতো দেশে আরেকটি এক-এগারোর আয়োজন চলছে। তবে বাংলাদেশের যুবসমাজ এ ষড়যন্ত্র বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের পরিকল্পিত নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন এই সরকারের ওপর আশা হারিয়ে ফেলে-সেই চক্রান্ত হচ্ছে। এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে এক-এগারোর কুশীলবরা। জাতীয় সরকারের তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে। এরপর কিছু ব্যক্তি সরব হয়েছেন। আজ তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সুতরাং শেখ হাসিনাকে হটাতে হবে-এটা সুশীলদের হিসাব। তারা শুরু করেছে সেই পুরনো খেলা। চারদিকে হতাশার নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে।

সেই এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে এখনও কিছু গণমাধ্যম সক্রিয় রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিছু কিছু গণমাধ্যম এখন বিরোধী দলের ভূমিকায় নেমেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই সমালোচনা যদি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়, তাহলে সমালোচনা করার অধিকার জনগণেরও রয়েছে। কিছু কিছু পত্রিকা এরকম কাজ করছে। দেশটাকে ঝুঁকিপূর্ণ, সংকটময়, সরকার ব্যর্থ এটা প্রমাণ করতে তারা মরিয়া।
উন্নয়ন সহযোগীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কিছু উন্নয়ন সহযোগী আছে, যারা দেশে শক্তিশালী সরকার চায় না। ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এদের অস্বস্তিতে ফেলে। রাজনীতিবিদদের ছেড়ে এরা সুশীল বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পছন্দ করে। বাংলাদেশের উন্নয়ন নয়, এদেশের বাজার দখলই তাদের প্রধান স্বার্থ। মুখে এরা গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারের কথা বলে। বাস্তবে এদেশের বিরোধী শক্তির সঙ্গে এরা গোপন সখ্য গড়ে তোলে। এসব কারণে একটি গণতান্ত্রিক সরকার সংকটে পড়ে। তখনই একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথ তৈরি হয়।

শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, কয়েকজন সুশীল সম্প্রদায়ের লোক, নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট মধু খাওয়া কিছু লোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ মিলে আরেকটি এক-এগারোর আয়োজন করছে। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে কলাকুশলীরা গ্রিনরুমে অপেক্ষা করছে। তাদের এই অপেক্ষা অপেক্ষাই রয়ে যাবে।
পরশ বলেন, স্পষ্ট বলতে চাই-আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। শেখ হাসিনার থেকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য, বেশি নিরপেক্ষ আর কেউ নেই। তিনি নিরপেক্ষতার মূর্ত প্রতীক। শেখ হাসিনা নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা-নিরপেক্ষতার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন।

বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে একটা গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু সেই গণতন্ত্রের নাটাই ছিল অনির্বাচিত সুশীলদের হাতে। নির্বাচনের আগে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হত, তাদের হাতে থাকত অসীম ক্ষমতা। নিরপেক্ষ নির্বাচনের আড়ালে ক্ষমতার চাবি চলে গিয়েছিল অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে।

ওয়ান-ইলেভেন প্রসঙ্গে পরশ বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয়-বিএনপি খারাপ, আওয়ামী লীগও খারাপ। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলই ব্যর্থ। এভাবে সুশীলদের মাঠে নামানোর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সুশীলদের নেতা নির্বাচন করা হয় এই চট্টগ্রামের একজন অর্থনীতিবিদকে, তার হাতে তুলে দেয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার। চারদিকে ব্যর্থতার হাহাকার দেখিয়ে ভীতি সঞ্চার করা হয়। মঞ্চে আবির্ভূত হয় সুশীলরা। সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত নিয়ে ক্ষমতায় আসে অনির্বাচিত সরকার, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংবিধান অনুযায়ী একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন। কিন্তু সুশীল সংবিধান বিশেষজ্ঞরা ফতোয়া দিলেন-না না সবকিছু ঠিক আছে। সেই সময় একমাত্র শেখ হাসিনা বুঝেছিলেন-এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি বুঝেছিলেন- জনগণের ক্ষমতার চাবি আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সুশীলদের সিন্দুকে বন্দী। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হল।

তিনি ক্ষমতার লোভ ত্যাগ এবং অপরাজনীতি বন্ধ করতে সুশীলদের প্রতি আহ্বান জানান।

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ। নগর যুবলীগের চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
এদিকে সম্মেলন ঘিরে পুরো নগরজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। পাঁচলাইশ ও হোটেল রেডিসনকে কেন্দ্র করে রাস্তায় রাস্তায় ছিল প্রিয় নেতার সমর্থনে কর্মীদের উপস্থিতি। আর এই উপস্থিতি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নগর দুর্ভোগের। রাস্তায় রাস্তায় যানজটে দিশেহারা ছিল মানুষ।

সম্মেলন ঘিরে নগর দুর্ভোগ

পাথরঘাটার সঞ্চয়িতা চক্রবর্তীর মেয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুলে পড়ে। কিন্তু সকাল স্কুল ছুটির পর তাকে আনতে গিয়ে কাজীর দেউরি মোড়ে আটকা পড়েন প্রায় এক ঘণ্টা। হোটেল রেডিসন থেকে যুবলীগের নেতৃবৃন্দ বের হবেন তাদের সামনে নিজেদের নেতার নামে স্লোগান দিতে পুরো রাস্তা দখল করে আছে কর্মীরা। এতে রেডিসন থেকে আসকারদীঘি পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ। ফলে লালখান বাজার, জুবিলী রোড, মেহেদীবাগ রোড ও জামালখানে আটকা পড়ে যাত্রীরা। আর এতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
শুধু হোটেল রেডিসন কেন্দ্রিক নয়, যুবলীগের সম্মেলনস্থল পাঁচলাইশের কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারকে ঘিরে প্রবর্তক মোড় থেকে পাঁচলাইশ মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালমুখি রোগীদের হেঁটে যেতে হয়। আর রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে আশপাশের সব সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় এবং যানজট ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে। এছাড়া বাচ্চাদের প্রাত:বিভাগের ছুটি ও দিবা বিভাগের স্কুল ছুটি হওয়ার সময় রাস্তা বন্ধ ও যানজট দেখা দেয়ায় অভিভাবক ও বাচ্চারা চরম দুর্ভোগে পড়েছিল।