সুপ্রভাত ডেস্ক »
ছাত্র—জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সবশেষ হিসাব বলছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনেই দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা।
গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। মাসের বাকি কয়েক দিনে একই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরে দেশের প্রবাসী আয় নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। এক মাসের রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো তিন বিলিয়ন তথা ৩০০ কোটি ডলারও স্পর্শ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে দেশে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এখন পর্যন্ত এক মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণে সেটিই রেকর্ড।
এ ছাড়া গত বছরের জুনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৪ কোটি ডলার। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল এ বছরেরই সেপ্টম্বরে— ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার। অক্টোবর মাসেও ২৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। সবশেষ গত মাস নভেম্বরে এসেছে ২২০ কোটি ডলার। খবর সারাবাংলা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ২১ দিনে যে গতিতে রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, তাতে ২০২০ সালের জুলাইয়ের রেমিট্যান্সের রেকর্ড ভাঙতে বাকি ১০ দিনে ৬০ কোটি ডলার দেশে আসা খুবই সম্ভব মনে হচ্ছে। আর ২১ দিনের গড়, অর্থাৎ দিনে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাকি দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যেই এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড ভাঙবে ডিসেম্বর। মাসের শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকলে এক মাসে তিন শ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ডও স্পর্শ হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিসেম্বরের মাসের প্রথম ২১ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার, অন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩১ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।
বিভিন্ন অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই—নভেম্বর) এক হাজার ১১৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২৩—২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৩৯১ কোটি বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২২—২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ১৬১ কোটি ডলার এবং ২০২১—২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার ও ২০২০—২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
এ ছাড়াও ২০১৯—২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮—১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭—১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬—১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫—১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার ও ২০১৪—১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স
২০২৩ সালে প্রবাসী দুই হাজার ১৯২ কোটি (২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২২ সালে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিছিলেন তারা।
অন্যদিকে ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার ও ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।