সুপ্রভাত ডেস্ক »
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি রিপোর্ট এটা হাইলাইট করে যে পিএম২.৫ (ক্ষুদ্র বায়ু কণা) এখন বিশ্বব্যাপী অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ।
সারা বিশ্বে ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে বায়ুর গুণমান। বিশেষ করে ভারত ও চিনের মতো দেশ ব্যাপকভাবে বায়ু দূষণের কবলে পড়েছে। ক্ষুদ্র কণা (পিএম), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (এনও২), এবং ওজোন (ওথ্রি) দ্বারা সৃষ্ট, দূষিত বায়ুর গুণমান, হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
বায়ু দূষণ কীভাবে ক্ষতি করে হার্টের
বায়ু দূষণ বিভিন্ন উপায়ে হার্টের ক্ষতি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যে এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি, সেই সমস্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাতাসের ক্ষুদ্র কণা, যা ফুসফুসের গভীরে গিয়ে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে, শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন সৃষ্টি করে।
এই প্রদাহ এথেরোস্ক্লেরোসিস নামক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে ধমনীতে চর্বি জমা হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হতে পারে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি রিপোর্ট এটা হাইলাইট করে যে পিএম২.৫ (ক্ষুদ্র বায়ু কণা) এখন বিশ্বব্যাপী অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাবের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এটি। এই ক্ষুদ্র কণাগুলি জলে দ্রবণীয় আয়ন, কার্বন-ভিত্তিক কণা এবং আরও নানান ক্ষতিকারক পদার্থ ধারণ করে। তাই জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি এটি।
পিএম২.৫-এ এক ধরনের কার্বনকে কালো কার্বন বলা হয়, যা গ্যাস বা কয়লার মতো জ্বালানির আধা পোড়া অংশ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি সূর্যালোক শোষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করে ফেলে। যানবাহন থেকে ধোঁয়া বেরিয়েও এই কালো কার্বনের জন্ম দেয়।
সুইডেনের একটি গবেষণায় বাতাসে কালো কার্বন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এটি পরামর্শ দেয় যে কালো কার্বন এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো একটি রোগের কারণ হতে পারে। এই রোগে ধমনীতে চর্বি জমা হয়ে যায়। যা পরবর্তীতে, মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
কাদের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি
বৃদ্ধ, শিশুদের উপর এর প্রভাব বেশি পড়ে। তবে, হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের উপরও বায়ু দূষণের প্রকোপ অঢেল। শিশুরা, বিশেষ করে, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ তাদের ফুসফুস এখনও বিকশিত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। তারা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। এর জন্য দূষণ থেকে শিশুদের দূরে রাখা জরুরি।
বায়ু দূষণ যেভাবে হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তা জটিল। দূষণ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করতে পারে, যা রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং হৃদরোগকে আরও খারাপ করে তোলে। এগুলি শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপেও হস্তক্ষেপ করতে পারে, যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং উচ্চ রক্তচাপের দিকে নিয়ে যায়। গবেষণা আরও দেখায় যে দূষণ রক্তকে পরিবর্তন করতে পারে, এটি জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি করে তোলে। এটি গভীর শিরা থ্রম্বোসিস (শিরাগুলিতে রক্ত জমাট বাঁধা) বা পালমোনারি এমবোলিজম (ফুসফুসে জমাট) এর মতো গুরুতর অবস্থার কারণ হতে পারে, যা হৃদরোগের আরও বেশি ক্ষতি করে।
প্রসঙ্গত, দূষণ থেকে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে। তবে, হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বায়ুর গুণমান উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং সংস্থাগুলি দূষণ কমানোর জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। দূষণ সীমিত করার জন্য নানান নিয়ম প্রণয়ন করা হচ্ছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবহারকে দ্রুত স্থিতিশীল করারও চেষ্টা চলছে। এছাড়াও যে দিন বাতাসের গুণমান বেশি খারাপ থাকবে, সেদিন মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বায়ু পরিশোধক ব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে। দূষণের ঝুঁকি কমাতে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনেও সুস্থতা বজায় রাখা যেতে পারে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা