সুপ্রভাত ডেস্ক »
১৫ ওভারেই নিতে পেরেছিল ৪ উইকেট। তখন জিম্বাবুয়ের দলীয় স্কোর মাত্র ৪৯ রান। শুরুটা আশা জাগানিয়া হওয়ার পরেও কে ভেবেছিল ম্যাচটা বের করে নিতে পারবে স্বাগতিক দল? অসম্ভব সেই কাজটি জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত করেছে যদিও। কিন্তু সেখানে অবদান ছিল বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়েরও। তাতে বাংলাদেশের মুঠো গলে বেরিয়ে গেলো সিরিজ বাঁচানোর সব চেষ্টা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের পরাজয়ে ৯ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারের (২-০) লজ্জায় ডুবলো তামিম ইকবালের দল। সর্বশেষ বাংলাদেশ ২০১৩ সালে সিরিজ হেরেছিল।
তিন ওভারের মাঝে জোড়া আঘাতে স্বাগতিকদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তুলে নেন তাকুদজোয়ানাশে কাইতানো ও ইনোসেন্ট কাইয়ার উইকেট। অষ্টম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরের উইকেট মিরাজ তুলে নিলে বিপদ আরও বাড়ে। ১৫ ওভারে তাইজুল মারুমানিকে ফেরালে হারই উঁকি দিতে থাকে জিম্বাবুয়ের। তার পরেও জিম্বাবুয়েকে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে দেননি সিকান্দার রাজা ও অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। ঠিক এই সময়ে জিম্বাবুয়ের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান দুজন।
এই জুটি এত দ্রুত রান তুলতে থাকে যে রান রেটের শুরুর ঘাটতিও পূরণ হয়ে যায় তাতে। প্রথম পঞ্চাশে লাগে ৯৬ বল, দ্বিতীয় পঞ্চাশে ৫৬। তারপর ধীরে ধীরে রানের গতিও বাড়তে থাকে। তৃতীয় পঞ্চাশে পৌঁছাতে লেগেছে মাত্র ৩১ বল! পরের দুই পঞ্চাশ পূরণেও বল লেগেছে ৪৬ ও ৩৬। যার পুরো কৃতিত্ব চাকাভা ও রাজার। অথচ এই জুটিকে ২৫.২ ওভারে ভেঙে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে হারের গতিপথ নির্ধারণের দায়টা বাংলাদেশরই।
২৫.২ ওভারে বল করছিলেন মিরাজ। অযথা রান নিতে গেলে রানআউটের দ্বারপ্রান্তেই ছিলেন রাজা। কিন্তু নন-স্ট্রাইকে মিরাজ এমন বোকামি করলেন। যাতে জীবন পেয়ে যান জিম্বাবুয়ের এই ম্যাচ জেতানো তারকা। রিপ্লেতে দেখা গেলো মিরাজ যে হাতটিতে বল নিলেন, সেই হাতে স্টাম্প ভাঙলেন না। ভাঙলেন অন্য হাতে! তাতে এক রান পূরণও হয়ে যায় স্বাগতিকদের। রাজা তখন ৪২ রানে ব্যাট করছিলেন। গত ম্যাচে ঠিক এমন স্কোরেই তাকে আউটের সুযোগ মিস করেছিল বাংলাদেশ। বাকিটা সবারই জানা। জীবন পেয়ে তারপর ছক্কা মেরে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি। পরে তো সেঞ্চুরি পেয়েছেন দুজনেই। রাজা পেয়েছেন ব্যাক-টু ব্যাক। আর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন চাকাভা।
জয়ের মঞ্চ গড়তে এই দুজনের ২০১ রানের জুটি ছাপিয়ে গেলো গত ম্যাচের রেকর্ডকেও। দলীয় ২৫০ রানে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। ততক্ষণে জয়ের কাছে পৌঁছে গেছে স্বাগতিক দল। মিরাজের ঘূর্ণিতে ১০২ রানে তালুবন্দি হন রেজিস চাকাভা। যা তার ক্যারিয়ার সেরাও। ৭৫ বলের অসাধারণ ইনিংসটিতে ছিল ১০টি চার ও ২টি ছয়।
রাজা একপ্রান্ত আগলে পথটা ঠিক রাখলেও সেটা ছিল মন্থর গতির। কিন্তু ৪৭তম ওভারে ম্যাচটা প্রায় শেষ করে ছাড়েন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা টনি মুনিয়োঙ্গা। শরিফুলের এই ওভারে দুটি ছয় ও এক চারে ম্যাচটা নিয়ে আসেন হাতের মুঠোয়। অবশ্য এমন সময়ে ক্যাচ ছাড়ার নজিরও রাখে বাংলাদেশ। মিনি ঝড় তোলা মুনিয়োঙ্গা ১৬ বলে দুই চার ও দুই ছক্কায় ৩০ রানে অপরাজিত থেকেছেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের নায়ক রাজা ১২৭ বলে অপরাজিত থেকেছেন ১১৭ রানে। তাতে ছিল ৮টি চারের বিপরীতে ৪টি ছয়। ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে ম্যাচটা জেতে ৪৭.৩ ওভারে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে করেছে ২৯০ রান। মাহমুদউল্লাহর হার না মানা ৮০ রানের সঙ্গে তামিমের ৫০ ও আফিফের ৪১ রানে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে সফরকারীরা।
সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচেও জ্বলে ওঠে তামিমের ব্যাট। কিন্তু ফিফটিতে আটকা পড়েন আবার। আগের ম্যাচে ৬২ রানের ইনিংস খেলা তামিম এবার আউট ৫০ রানেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ৫৫তম হাফসেঞ্চুরি।
তামিমের সঙ্গে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন এনামুল। লিটন না থাকায় প্রমোশন পেয়ে ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ হয় তার। শুরুটা মন্দ ছিল না। তামিমকে সঙ্গ দিয়ে নিজেও স্কোর বাড়াতে সাহায্য করছিলেন। যদিও তার সেই পথচলা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ রান করে রানআউটের শিকার এই ডানহাতি ব্যাটার।
তারপর বড় জুটির আভাস ছিল মুশফিকুর রহিম-নাজমুল হোসেন শান্তর খেলাতে। সাবলীল ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের পথচলায় ছেদ পড়ে মুশফিকের আউটে। খানিক পর শান্তও ধরেন প্যাভিলিয়নের পথ।
আগের ওয়ানডেতে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। ছিলেন অপরাজিত। আজ ওয়েসলি মাধেভেরের বলে ২৫ রানে ফিরে যান। মুশফিকের বিদায়ের পর অবিচল ছিলেন শান্ত। লিটন দাসের চোটে একাদশে জায়গা পেয়ে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছিলেন এই ব্যাটার। কিন্তু ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস খুব বেশি বড় করতে পারেননি। ৩৮ রানে ফিরতে হয়েছে মাধেভেরের শিকার হয়েই। উইকেটকিপার রেজিস চাকাভার গ্লাভসে ধরার পড়ার আগে শান্ত ৫৫ বলের ইনিংস সাজান ৫ বাউন্ডারিতে।
১৪৮ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। প্রথম ম্যাচে তিনি ছাড়া হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ব্যাট করা সবাই। সেই অপূর্ণতা ঘুচলো বাঁচা-মরার ম্যাচে। অন্য প্রান্তে উইকেট হারালেও দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত খেলেছেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৪ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস। মাহমুদউল্লাকে যোগ্য সঙ্গে দিয়েছেন আফিফ হোসেন। পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৮১ রানের জুটি। আফিফ খেলেন ৪১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৪১ রানের ইনিংস। এরপর লেজের দিকে শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন। খবর বাংলাট্রিবিউন।
জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল বোলার সিকান্দার রাজা। এই স্পিনার ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ওয়েসলি মাধেভেরে ৯ ওভারে ৪০ রান খরচায় পেয়েছেন ২ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯০/৯ (মাহমুদউল্লাহ ৮০*, তামিম ৫০, আফিফ ৪১, শান্ত ৩৮, মুশফিক ২৫, এনামুল ২০, মিরাজ ১৫, তাইজুল ৬; রাজা ৩/৫৬, মাধেভেরে ২/৪০)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৭.৩ ওভারে ২৯১/৫ (রাজা ১১৭*, চাকাভা ১০২, মুনিয়োঙ্গা ৩০*; হাসান ২/৪৭, মিরাজ ২/৫০, তাইজুল ১/৪৮)
ফল: জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে জয়ী