আজ থেকে শুরু হচ্ছে কলেজ ভর্তি
ভূঁইয়া নজরুল »
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও বিজ্ঞানের প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী এবার সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না? আসন সংখ্যার তুলনায় অতিরিক্ত জিপিএ-৫ পেয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষার্থী শুধু সরকারি কলেজ নয়, কাঙ্খিত বেসরকারি কলেজেও ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ২৯১ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচ সরকারি কলেজ এবং কলেজিয়েট ও মডেল কলেজে সিট রয়েছে ৩ হাজার ৪০০। ফলে জিপিএ-৫ পেয়েও সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না ৭ হাজার ৮৯১ জন। এছাড়া অন্যান্য বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রামে প্রবেশ করলে এই সংখ্যা আরো বাড়বে।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ থাকে নগরীর শীর্ষ পাঁচ সরকারি ( চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ, মহিলা কলেজ, বাকলিয়া কলেজ) কলেজ। কিন্তু এসব কলেজে জিপিএ-৫ পেয়েও বিশেষ করে বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। তাহলে তাদের জায়গা কোথায় হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে সরকারি মহসিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্জন নন্দী বলেন, ‘জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সকলে যে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে হবে এমন নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজগুলোতেও ভর্তি হতে পারে। আর এতে বেসরকারি কলেজগুলো ভালো ছাত্র পেলে তারাও ভালো ফলাফল করতে পারবে।’
প্রফেসর অঞ্জন নন্দীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে নগরীর কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, এটা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য একটি বিরাট সুযোগ। যেহেতু এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বেশি তাই শিক্ষার্থীদের সরকারি কলেজের বাইরের কলেজগুলোতে ভর্তি হতেই হবে। এতে এসব কলেজগুলো ভালোর তকমা লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে।
তবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সরকারি কলেজের বাইরে গিয়ে ভালো মানের বেসরকারি কলেজগুলোতেও ভর্তির সুযোগ তেমন পাবে না। এর কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা জানায়, পাঁচ সরকারি কলেজের বাইরে পছন্দের তালিকায় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, নৌ বাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কলেজ ছাড়া অন্য কলেজ তেমন নেই। ১০টি কলেজ পছন্দের তালিকায় মেলাতে গেলেও এসব কলেজ পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এজন্য পছন্দক্রম খুব দরকারি
শিক্ষার্থীদের এই শঙ্কার সাথে একমত পোষণ করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা যাতে পছন্দের কলেজ পায় এজন্য পছন্দক্রম খুব দরকারি। প্রাপ্ত জিপিএ এবং বাসার দূরত্ব ও কলেজের টিউশিন ফি বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই ১০টি কলেজ পছন্দ করবে। অন্যথায় ভর্তির প্রাথমিক তালিকায় কলেজ পাওয়া কঠিন হতে পারে।’
এদিকে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে ৫টি কলেজ পছন্দ করলেও আবেদন করা যাবে। তবে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দ করা যাবে। এ বিষয়ে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন,‘ পছন্দক্রম এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে উপরের কলেজে আসন খালি হলে ভর্তি নিশ্চায়নে পরও অটো মাইগ্রেশন পদ্ধতিতে ভর্তির সুযোগ থাকছে। তাই ১০টি কলেজ পছন্দ দেয়াই উত্তম।’
এক মোবাইলে একের অধিক আবেদন করা যাবে না
এদিকে প্রতিবছর ভর্তি মৌসুমে কিছু কলেজ ভুয়া আবেদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফেলে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত কয়েক বছরের মতো এবারো তা ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ভর্তির আবেদনের সময় শিক্ষার্থীর/অভিভাবকের একটি মোবাইল নম্বর চাওয়া হবে। সেই নম্বরে শুধুমাত্র একজন আবেদনকারীর আবেদন করা যাবে। আর সেই নম্বরেই শিক্ষার্থীর সব তথ্য যাবে। এই মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা যাবে না।
ভর্তির ফি দেয়ার পদ্ধতি
আবেদনের পূর্বে শিক্ষার্থীকে নগদ, সোনালী ব্যাংক, টেলিটক, বিকাশ, উপায় ও রকেটের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার বোর্ড, রোল নম্বর, পাশের সাল ব্যবহার করে ১৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। ৮ জানুয়ারি ( আজ শনিবার) থেকে ১৫ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ভর্তির আবেদন করা যাবে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছুক সব শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এই ওয়েবসাইটে www.xiclassadmission.gov.bd গিয়ে অনলাইনে আবেদন করবে। এদিকে ভর্তিতে রয়েছে ৫% মুক্তিযোদ্ধা কোটা। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা সন্তানের সন্তানদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যথাযথ ডকুমেন্ট থাকতে হবে।
প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ ২৯ জানুয়ারি
৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ জানুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে থাকা পিন কোড দিয়ে ভর্তির নিশ্চায়ন করবে।
প্রথম পর্যায়ে যারা ভর্তি নিশ্চায়ন করবে না তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনরায় আবেদন করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফলাফল ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশিত হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পর্যায়ে মনোনীতদের নিশ্চায়নের জন্য ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাখা হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের জন্য। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভর্তিকৃতদের মাইগ্রেশনের ফলাফল ও তৃতীয় পর্যায়ের মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তির নিশ্চায়ন করবে ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। ভর্তি নিশ্চায়ন শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে ২ মার্চ থেকে।
উল্লেখ্য, এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় ছাড়া এর আগে কলেজে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অনলাইন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই আবেদন ও ভর্তি নিশ্চায়ন করতে পারবে।