নিজস্ব প্রতিবেদক
দুটি প্রতিষ্ঠানের পৌরকরের নথিতে ঘষামাজা করে ৪০ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল আলমকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) মেয়র এই অনিয়মের অভিযোগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান
মেয়র স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে প্রধান উপদেষ্টার মূখ্যসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রামের পরিচালক বরাবরে এর অনুলিপি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘কর নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ২০২৩ সালের ২৮ মে। আপনি ওই সময় থেকে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করাসহ দোষীদের শনাক্ত করা এবং সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর পুনঃনির্ধারণে কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
এ কারণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং দোষী ব্যক্তিদের যথাসময়ে কোনো শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়, ‘এতে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ৬২ (২) ধারা অনুসারে আপনার দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।’
এদিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে যান। সেসময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
প্রশিক্ষণ শেষে গত ২২ অক্টোবর সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবরে যোগদানপত্র জমা দেন শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (সিসিসি) অভিযান চালিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণে অনিয়মের প্রমাণ পায়।
সেদিন দুদক উপ-পরিচালক সায়েদ আলম বলেন, ‘একটা হলো এছাক ব্রাদার্স; আরেকটা ইনকনট্রেড। প্রথমটির ভ্যালুয়েশন ২৬ কোটি টাকা ছিল। পরে তা ঘষামাজা করে ৬ কোটি টাকা করা হয়। ইনকনট্রেডের ২৫ কোটি টাকা ভ্যালুয়েশনকে ঘষামাজা করে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেটার উপরে পৌরকর নির্ধারণ করা হয়।’
‘কর কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও জড়িত, কারণ তারা বেনিফিশিয়ারি। তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে।’
অন্যদিকে চসিকের নিজস্ব তদন্তে কর নির্ধারণে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় বুধবার কর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপকর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অনিয়মে সহায়তার অভিযোগে তিন হিসাব সহকারী মঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সিটি করপোরেশনের সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চসিক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেডের কর নির্ধারণে বার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু পরে আপিল রিভিউ বোর্ডের শুনানিতে উপস্থাপনের সময় ফরম থেকে নির্ধারিত পৌরকরের শুরুর অংক ‘২’ মুছে দেওয়া হয়।
এতে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই কর ২০ কোটি টাকা করে কমে যায়। আপিল রিভিউ বোর্ডে ইনকনট্রেড লিমিটেডের শুনানি ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর এবং এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শুনানি হয়েছিল ২০২১ সালের ১৩ জুন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, চসিকের অনিয়মের বিষয়টি যখন উথ্থাপিত হয় তখন আমি ছিলাম না। এ বিষয়ে চসিকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এ বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। বিশেষ করে চসিকের আইন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা জজ মহিউদ্দীন মুরাদ বিষয়টি ভালো জানবেন। তবে আমার ক্ষেত্রে যা বলতে পারি, তদন্তে দীর্ঘ সময়ক্ষেপন হয়েছে। সময়ের বিষয়ে আমাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিষয়টি তার নজরে আসে। তিনি অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তে তদন্তের নির্দেশ দেন। প্রথমে চার সদস্যের কমিটি করা হয়, পরে তা সম্প্রসারিত করে পাঁচ সদস্য করা হয়। চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক, আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী ছিলেন সদস্য সচিব। অন্য সদস্যরা হলেনুনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার এবং কর কর্মকর্তা আব্দুল মাজিদ।
এ বিষয়ে জানতে চসিকের আইন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা জজ মহিউদ্দীন মুরাদ ও চসিক মেয়র বরাবর একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।




















































