সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণ কাজ আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু দ্রুতগতির ওই রেলপথের চট্টগ্রাম-দোহাজারী অংশে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু। যার উপর দিয়ে বর্তমানে ১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে ট্রেন। ওই সেতু দিয়ে যেন দ্রুত গতির ট্রেন চলতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। খবর ঢাকা পোস্টের।
বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া জানিয়েছেন, আগামী আগস্ট মাসের এক তারিখ থেকে এই সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এতে করে সেতুর উপর দিয়ে ৩ মাস পর্যন্ত ট্রেন ও সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা সেতুটি ৩ মাসের জন্য বন্ধ রাখার নোটিশ দিয়েছি। তবে আমরা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এটি খুলে দেওয়ার চেষ্টা করব। সেতুটি মেরামত করে চালু না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেল চলাচল বন্ধ থাকবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইতোমধ্যে কর্ণফুলীতে ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে। সেতুটি মেরামতের জন্য ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেল পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। এ কারণে সেতুটি মেরামত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্তমানে সেতুটি ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে রেল চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ভারী লোকোমোটিভের বোঝা বহন করতে সক্ষম নয়। সেতুটি সংস্কার হলে এর উপর দিয়ে ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারবে।
এদিকে সেতু দিয়ে যেহেতু ট্রেনের পাশাপাশি বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়ি চলাচল করে, সেহেতু ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। এজন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে যানবাহন পারাপারের জন্য ৩টি ফেরি চালু করতে যাচ্ছে। এখানে দুটি ফেরি সার্বক্ষণিক চলাচল করবে এবং অন্যটি অতিরিক্ত হিসেবে থাকবে। এই পথে ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের জন্য টোল দিতে হবে। ফেরির টোল হারও ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন জানান, কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হলে তখন ফেরি দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
অনুমোদিত ফেরির টোল হারে দেখা গেছে, রিকশা, ভ্যান, বাইসাইকেল ও ঠেলাগাড়ির জন্য ৫ টাকা, মোটরসাইকেলের জন্য ১০ টাকা, ব্যাটারিচালিত তিন ও চার চাকার গাড়ির জন্য ২৫ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) ৫৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৯০ টাকা, মিনিবাস ১১৫ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যানবাহনের (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর) জন্য ১৩৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, বড় বাস ২০৫ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২২৫ টাকা, ভারী
ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা এবং ট্রেইলারের জন্য ৫৬৫ টাকা টোল প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ। ওই পথে বর্তমানে তিনটি ট্রেন চলাচল করত। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন ও একটি তেলের ট্যাংকার। রেলপথ অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে ওই পথে চলাচল করা ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৪৮ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। যদিও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যেসব টুরিস্ট ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে সেগুলোর পরিচালন গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ব্রড গেজ ট্রেনের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেনের ক্ষেত্রে ৮০ কিলোমিটার।