করোনা চিকিৎসায় নগরীর তিন আইসোলেশন সেন্টারের চিত্র :
রুমন ভট্টাচার্য :
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নগরীর তিনটি স্থানে চালু হওয়া আইসোলেশন সেন্টারগুলোর অনেক শয্যা খালি পড়ে আছে। চালুর এক সপ্তাহ পার হলেও শয্যার অনুপাতে রোগীর সংখ্যা একেবারেই কম। তবে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ধীরে ধীরে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ছোটোপুলের সিটি হলে গত ১৩ জুন চালু হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে ২৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে মাত্র ৯ জন। একইদিন পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু হওয়া বন্দর-পতেঙ্গা করোনা হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৭ জন। ১৪ জুন পোর্ট কানেকটিং রোডে চালু হওয়া করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ৭০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৪০ জন।
শনিবার (২৭ জুন) সরেজমিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে ২৫০ শয্যার বিপরীতে মাত্র ৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভেতরের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং গুছানো। সুরক্ষাসরঞ্জাম পরিহিত ৬ জন ওয়ার্ডবয় দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। রোগীর স্বজন ও বহিরাগতদের ভিতরে প্রবেশে রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। পুরো এলাকা রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। বাইরে রাখা রয়েছে সিকিউরিটি গার্ড।
জানতে চাইলে সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারের পরিচালক সুশান্ত বড়–য়া সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা রোগী ভর্তি ও সেবা উন্মুক্ত। ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে ওষুধ, খাওয়া-দাওয়া ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস একদম ফ্রি। যারা কোভিড পজেটিভ ও সাসপেকটেড তারা সরাসারি এখানে ভর্তি হতে পারবে। তবে সাসপেকটেড রোগীদের আমরা কাউন্সেলিংয়ের মধ্য দিয়ে ভর্তি করে থাকি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা হিসেবে মশারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে রোগীদের জন্য।
তিনি আরো বলেন, ‘ডাক্তার ১৫ জন, নার্স,ওয়ার্ডবয়, সেবক ও টেকনেশিয়ানসহ রয়েছে ৫৫ জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে ৯ জন। সবাই তিন শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত। আমি ও উপ-পরিচালক ডা. মুজিবুল আলম চৌধুরী ও ডা. সুমন তালুকদার সার্বক্ষণিক তদারকি করছি এবং পুরো বিষয় তদারকি করছেন স্বয়ং মেয়র মহোদয় ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।’ রোগীদের সকাল দুপুর ও রাতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রোগী কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন সবেমাত্র আমরা যাত্রা শুরু করেছি। ১৩ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে। ২১ জুন ২ জন রোগী ভর্তি হন। এখন সে সংখ্যা ৯ জনে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এছাড়া ১৬ জন আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। সামনে সে সংখ্যা হয়ত আরো বাড়বে। সে হিসেবেও আমাদের সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে।’ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রোগীদের রাখা হলেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারের গত ২১ জুন ভর্তি হওয়া মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সকালের নাস্তায় ডিম, পাউরুটি কলা, দুপুরে কোনোদিন ভাতের সাথে মাছ, সবজি, আবার কোনোদিন ভাতের সাথে মাংস ও সবজি দেওয়া হচ্ছে। খাবারের মান খুব ভালো।’
প্রায় একই কথা বললেন একই তারিখে ভর্তি হওয়া মো. ইব্রাহিম, শিল্পী আকতার ও নাদিম জাওয়াত। তারা সকলেই চিকিৎসাসেবা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট বলে জানান।
এদিকে, বন্দর-পতেঙ্গা করোনা হাসপাতাল ও পোর্ট কানেকটিং রোডের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম। তবে আউটডোরে প্রতিদিন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন।
এ বিষয়ে বন্দর-পতেঙ্গা করোনা হাসপাতালের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক জাইদুল ইসলাম দুর্লভ জানান, ১৩ জুন যাত্রা শুরুর পর থেকে রোগী ভর্তির সংখ্যা তেমন বাড়েনি। বর্তমানে ৫০ শয্যার বিপরীতে ৭ জন পজেটিভ রোগী ভর্তি আছে। আউটডোরে প্রতিদিন ১৫-২০ জন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ৬ জন ডাক্তার, ২ জন নার্স, ২ জন ব্রাদার, ২ জন সুপারভাইজার, ১৫ স্বেচ্ছাসেবক ২৮ ঘণ্টায় ২ শিফট করে দায়িত্ব পালন করছেন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। ভর্তিকৃত রোগীদের সবকিছুই বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
পোর্ট কানেকটিং রোডের করোনা আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তা শাদ শাহরিয়ার জানান, ৭০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ৪০ জন রোগী ভর্তি আছে। ইনডোরের চেয়ে আউটডোরে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শনিবার আউটডোরে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১০৪ জন। সামনে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। ভর্তি হওয়া রোগীদের সবকিছুই এখানে থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। মোটামুটি ভালোই সহযোগিতা পাচ্ছি মানুষের কাছ থেকে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বর্তমানে ৭ হাজার ৬২৫ জন করোনা পজিটিভ রোগী থাকলেও অনেকেই ঘরে থাকছে। শ্বাসকষ্ট না হলে তারা হাসপাতালমুখী হচ্ছে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ