সুপ্রভাত ডেস্ক »
সাম্প্রতিক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার ৫ হাজার একর জমিতে চাষ করা বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত। এতে সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দুই উপজেলার চাষিদের মুখে নেই হাসি। গত ৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণের ফলে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল তছনছ করে দিয়েছে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার ৫ হাজার ১৬৪ একর বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেত ও আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। এতে দুই উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
বন্যায় কৃষকদের প্রায় ৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষকরা ধারদেনা করে শঙ্খচরসহ চন্দনাইশ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন এবং সাতকানিয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার একর ফসলি জমিতে আগাম মৌসুমি সবজি বেগুন, মুলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, শসা ও ঢেঁড়স রোপণ করেছিলেন। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। এতে শঙ্খচরের কৃষকদের ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন সংশ্নিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি, বৈলতলী, বরমা, বরকল ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বন্যায় চন্দনাইশের নি¤œাঞ্চলে যেসব সবজি, আউশ ও আমন ক্ষেত ছিল সিংহভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে ১০৪০ হেক্টর সবজি, ১২০০ হেক্টর আউশ, ৪৫০ হেক্টর আমনের বীজতলা এবং ১৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত ছিল। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২১২ হেক্টর সবজি, ৯৯৫ হেক্টর আউশ, ৫৮৭ হেক্টর আমনের বীজতলা এবং ৩০৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার মত। খবর বাংলানিউজ।
শঙ্খচরের কৃষক সাতকানিয়ার উত্তর কালিয়াইশের মোজাম্মেল হক জানান, টানা ৪দিন ধরে পানির নিচে থাকায় সব সবজি ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পানি কমে আসার পর ক্ষেতে গিয়ে দেখেন পলি ও বালু জমে তার ক্ষেতের অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ক্ষেতে যেসব সবজি গাছ দেখা যাচ্ছে তাও মরে যাচ্ছে। বন্যায় পচে যাওয়ায় কৃষকদের চাষ করা ক্ষেতে আর কোনো সবজি পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
শঙ্খচরের কৃষক উত্তর কালিয়াইশ গ্রামের নূর আহমদ বলেন, শঙ্খচরে খাজনায় নেওয়া জমিতে সদ্য মুলার চাষ করেছি। বর্তমানে পুরো ক্ষেতের উপর ১০ ফুট উচ্চতায় বালি ও পলি পড়ে গেছে। এ বন্যায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থও নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন বলেন, চন্দনাইশে সবজি সহ আউশ ও আমনের বীজ তলা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকের বেশ কিছু দিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি অফিস সব সময় কৃষকের পাশে আছে। যে কোনো ধরণের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এবারের বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতির রির্পোট তৈরী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে কৃষি প্রণোদনা পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে তা বিতরণ করা হবে।