২৬ ঘণ্টার রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ইয়াসিন কবির জয়

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে ২১ জুন নয়াদিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ এ দ্বিপাক্ষিক সফর উপলক্ষে ২১ থেকে ২২ জুন নয়া দিল্লিতে অবস্থান করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ভারত সফর হবে ২৬ ঘণ্টার মতো।

ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফরসঙ্গী দল ২১ জুন শুক্রবার বেলা ২টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে পালাম বিমান বন্দরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। দিল্লিতে পৌঁছার পর এ দিনই (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবাসস্থলে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর।

দ্বিতীয় দিন ২২ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়া দিল্লির ফোরকোর্টে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে সই করবেন।

একইদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক উপলক্ষে হায়দ্রাবাদ হাউসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ ও  চুক্তি বিনিময় এবং দুই নেতার প্রেস বিবৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এখানে।

এছাড়াও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের কথা রয়েছে।

২২ জুন বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এসময় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।

দুদিনের এ সফর শেষে ২২ জুন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে করে ঢাকার উদ্দেশে নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা ঠিক হবে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে দুই দেশ। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতার কাছ থেকে নির্দেশনার বিষয়ে কাজ চলছে। শুধু তাই না, নতুন নতুন ক্ষেত্রে সম্পর্ক কীভাবে বাড়ানো যায়, সেব্যাপারেও একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি জানান, এই সফরে সই হতে পারে ১০টিরও বেশি দলিল।

এবারে সফরে অগ্রাধিকার কী কী—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক আমরা আগামীতে কোথায় নিয়ে যেতে চাই, এ ধরনের একটি ভিশন কাজ করবে দুই দেশের মধ্যে। নিত্যদিনের যে বিষয়গুলো সেগুলো থাকবে। এর পাশাপাশি এই সফরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ ভবিষ্যতে আমরা দুই দেশের সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চাই এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র কী আছে – সেটি পরিবেশ হতে পারে, সেটি স্পেস সহযোগিতা হতে পারে, বৃহৎ কানেক্টিভিটি সহযোগিতা এবং এটি যতদূর চিন্তা করতে পারেন – আমার মনে হয় এগুলো অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে।’

সফরে কতগুলো দলিল বা চুক্তি সই হতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘অনেকগুলো নিয়ে কাজ চলছে। তবে আমরা ১০টিরও বেশি ইন্সট্রুমেন্ট সই হবে বলে আশা করছি।’

অমীমাংসিত ইস্যু

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো যেমন—সীমান্ত হত্যা, পানি বন্টন সমস্যা বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার এসব বিষয় কয়েক বছর ধরে আলোচনায় আছে এবং আরও কয়েক বছর হয়তো আলোচনায় থাকবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সীমান্ত বিষয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অবস্থান হচ্ছে হত্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে এবং নন-লিথাল (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়গুলো কর্মকর্তা স্থরে আলোচনা হচ্ছে এবং আমাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে।’

পানি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গঙ্গা চুক্তির পুনঃনবায়নের বিষয়ে অবশ্যই কথা হবে। তিস্তার বিষয়ে চুক্তি যে পর্যায়ে আছে – সেটি নিকট ভবিষ্যতে কোনও ধরনের কিছু হবে, এ ধরনের কোনও পরিস্থিতি আমরা দেখছি না।’

তবে যেটি আশার কথা সেটি হচ্ছে তিস্তাকে ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। সেটার বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর বিষয় রয়েছে। এটির সঙ্গে তিস্তা চুক্তির সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। অবশ্যই বড় কোনও প্রকল্প হলে পানি যতটুকু থাকা দরকার, সেটি নিশ্চয় বিবেচনা করা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘পানি নিয়ে বৃহৎ যে ভিশন অর্থাৎ নদী ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিয়ে দুই দেশ কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে – এটি নিয়ে আলোচনা চলবে।’

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রায় ১৪০০ কোটি ডলার এবং এটি তাদের দিকে বেশি। কিন্তু আমাদের পরিমাণ বাড়ছে এবং এটি কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সবচেয়ে বড় যেটি বিষয় হলো সেপার (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক প্রেফারেন্সিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট) কাজ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত থাকবে। সেপা হলে সমস্যাগুলো ঠিক হয়ে যাবে, তিনি জানান।

সচিব বলেন, ‘এই সফরে বৃহৎ যে নির্দেশনা এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা– এ বিষয়গুলো আমরা পাবো আশা করছি।’

কানেক্টিভিটি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে বড় অগ্রগতি হতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে সেটি আমাদের জন্য। যেমন পায়রা বন্দর, মোংলা বন্দর, চিটাগাং বে টার্মিনাল, মাতারবারি গভীর সুমদ্র বন্দর বিভিন্ন ধাপে চালু হবে। সবগুলো যখন চালু হবে, তখন আমরা এর একটি বড় অংশ ব্যবহার করবো। এটির অতিরিক্ত যে সক্ষমতা থাকবে, সেটি আমরা ভালোমতো ব্যবহার করতে পারবো যদি আমাদের সঙ্গে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি থাকে।’

ভারতের উত্তর-পূর্ব, নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে রেল কানেক্টিভিটি, পানি কানেক্টিভিটি, রোড কানেক্টিভিটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। এটি যদি থাকে, তবে আমাদের সক্ষমতার সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবো। আমাদের ওপর অন্যরা যদি নির্ভরশীল হয়, তবে আমাদের ওপর লেভারেজ বাড়বে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক সমৃদ্ধি চিন্তা করতে পারি। আমাদের লাভ থাকতেই হবে এবং একইসঙ্গে আমাদের আশেপাশে যারা আছে তারাও যদি লাভবান হয়, তাহলে এটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।’

সূত্র: বাসস ও বাংলা ট্রিবিউন