নিজস্ব প্রতিবেদক »
চীন দূতাবাসের সেক্রেটারি শি চেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দেড়শো শয্যার আধুনিক বার্ন ইউনিট হচ্ছে। আগুনে পোড়া রোগীরা উন্নত সেবা পাবেন। হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চুক্তি স্বাক্ষরের ২২ মাসের মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।’
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চমেক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন একটা বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা। মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত করুণ। ক্যান্সারের রোগী আস্তে আস্তে মারা যায়। অন্যান্য রোগীদেরও চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্ত একজন আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর জন্য প্রথম ২৪ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ে যাওয়া জটিল রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হতো। সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে অনেক রোগীকে বাঁচানো যেত না। এখন চট্টগ্রামেই এ চিকিৎসা হবে। এতে আগুনে পুড়ে যাওয়া মৃত্যুর সংখ্যাটা অন্তত কমিয়ে আনা যাবে।’
সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রামে বার্ন হাসপাতাল করার জন্য ১০ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটি হবে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল। আমরা এ বিষয়ে আজ (১২মার্চ) চীনা দূতাবাস ও প্রতিনিধির সঙ্গে মিটিং করবো। আগামীকাল (১৩ মার্চ) এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে আগুনে পোড়া রোগীরা উন্নত সেবা পাবেন।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শনের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে আধুনিক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের পর এই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন। এটি চীন সরকারের একটি উপহার। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
এ সময় চীনা প্রতিনিধি দল, চমেক কলেজ প্রিন্সিপ্যাল ডা. সাহেনা আক্তার, সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ এবং চীন দূতাবাসের সেক্রেটারি শি চেন উপস্থিত ছিলেন।
কেমন হবে বার্ন ইউনিট হাসপাতাল
চমেক হাসপাতালে পেছনে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। প্রকল্পটিতে ১৫০টি শয্যা থাকবে। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, এইচডিইউ ২৫টি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার করা হবে ২টি। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। রোগী আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা বানানো হবে। চট্টেশ^রী রোডের দিক থেকে একটি রাস্তা হবে। সেটি হবে বার্ন হাসপাতালের প্রধান রাস্তা। চমেক হাসপাতালের পেছনে ছাত্র হোস্টেলের দিক থেকে আসবে আরও একটি রাস্তা। সর্বশেষ রাস্তাটি হবে মিজান হোস্টেলের দিক দিয়ে। সেখানে মাঝখানে পাহাড় থাকায় তা ঘুরিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে আনা হবে।
হাসপাতালটি ৬তলা ভবনের করা হবে। প্রথম তলায় থাকবে ইর্মাজেন্সি ওর্য়াড এবং ওপিডি, দ্বিতীয় তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম ওর্য়াড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ড এবং অফিস।
এদিকে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় অবৈধ স্থাপনা সরাতে ইতোমধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- মার্চের ২০ তারিখের মধ্যে জায়গা খালি করে দিতে হবে স্টাফদের।
প্রসঙ্গটি নিয়ে চমেক পরিচালক বলেন, ‘শতাধিকের বেশি স্থাপনা রয়েছে। চীন প্রতিনিধিরা দ্রুত কাজ শুরু করতে চায়। জায়গা খালি করা হলে কাজ শুরু করবেন তারা। আমরা ২০ তারিখের মধ্যে সরে যেতে নোটিশ প্রদান করেছি।’
আগামী ২০ তারিখের মধ্যে সরে না গেলে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দেখার বিষয় না। যা করার জেলা প্রশাসন থেকে করা হবে।’