নিজস্ব প্রতিবেদক »
২০ বছর পর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী ‘জানে আলম’ হত্যা মামলার আসামি সৈয়দ আহমেদকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নগরের আকবরশাহ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সৈয়দ আহমেদের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ার উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত ইয়াকুব মিয়া।
তিনি কখনো উদ্বাস্তু, কখনো বাবুর্চি, কখনোবা নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন চট্টগ্রাম নগরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) নুরুল আবসার আজ শুক্রবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সৈয়দ আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০২ সালের ৩০ মার্চ সকালে জানে আলমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় ছেলে তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০০৭ সালের ২৪ জুলাই বিচারিক আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সৈয়দ আহমেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ৮ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেন। আপিলে সৈয়দ আহমেদসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২ জনকে যাবজ্জীবন ও বাকিদের খালাস দেওয়া হয়।
র্যাব কর্মকর্তা নুরুল আবসার বলেন, গ্রেপ্তারের পর সৈয়দ আহমেদকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তাঁর পলাতক জীবন সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন।
সৈয়দ আহমেদ জানিয়েছেন, জানে আলম হত্যাকাণ্ডের পরপরই তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ডাকাত দলের সঙ্গে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আত্মগোপন করেন।
প্রথম চার থেকে পাঁচ বছর সৈয়দ আহমেদ তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন ছেড়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, কুতুবদিয়া, পেকুয়ায়ার সাগর কূলবর্তী এলাকায় থাকতে শুরু করেন। পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় উদ্বাস্তু হিসেবে অবস্থান করেন।
সৈয়দ আহমেদ একপর্যায়ে জঙ্গল ছলিমপুরে মশিউর বাহিনীর প্রধান মশিউরের ছত্রচ্ছায়া ও সহযোগিতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে ওই এলাকায় থাকা নিজের জন্য নিরাপদ মনে করছিলেন না সৈয়দ আহমেদ। এবার তিনি চট্টগ্রামে বিভিন্ন মাজার এলাকায় বাবুর্চির কাজ শুরু করেন।
একপর্যায়ে সৈয়দ আহমেদ চট্টগ্রাম মহানগরের আকবরশাহ থানা এলাকার একটি বাড়িতে নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশে কাজ নেন। তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
র্যাব জানায়, পলাতক থাকাকালে সৈয়দ আহমেদ দুটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানান। তিনি তাঁর পরিবার-পরিজন-আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখেন। ফলে তাঁকে কোনোভাবেই শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।
সৈয়দ আহমেদকে লোহাগাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।