সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রতিবেদন অনুসারে, অর্থনীতিতে গতিমন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে ২০২৪ সালে গাড়ির নিবন্ধন কমেছে ১৪.৭ শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভোক্তারা গাড়ি কেনা কমিয়ে দেওয়ায় এর আগের বছর যানবাহনের নিবন্ধন এরচেয়েও বেশি-৩৭ শতাংশ কমেছিল।
বিআরটিএ-র তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে মাত্র ৩.০৮ লাখ গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৪৭ শতাংশ কম। যানবাহন নিবন্ধনে এই পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনি ট্রাক, অটোরিকশা, ট্যাংকার, ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলের বাজার। নিবন্ধন কমার মূল কারণ হিসেবে ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে প্যাসেঞ্জার কার-এর চাহিদা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি ছিল ২০২৪ সালে। আগের বছর বড় ধাক্কা খেলেও ডলারের দামের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও ২০২৪-এ ধনী পরিবার ও বিভিন্ন কোম্পানি প্যাসেঞ্জার কার কেনা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশে যানবাহন-অথবা স্থানীয়ভাবে নির্মিত গাড়ির যন্ত্রাংশ—আমদানিনির্ভর হওয়ায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের বাজারে গাড়ির ইউনিট মূল্যও বেড়ে গেছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিক যানবাহন সাধারণত ঋণ নিয়ে কেনা হয়। কিন্তু জ্বালানি ও শ্রম ব্যয়ের চাপ বাড়ায় বিদ্যমান মালিকরা ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন। ট্রাক, থ্রি-হুইলার, টু-হুইলার ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রেতা রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘ব্যাংকঋণের খরচ বাড়ার পর তাদের [গাড়িমালিক] বহর সম্প্রসারণের আগ্রহ কমে গেছে।’ খবর টিবিএস।
বিআরটিএ ২০টি বিভাগে গাড়ি নিবন্ধন করে। তবে কোনো বড় বিভাগের বিক্রিই দুই বছর আগের বিক্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি।
বাসের বিক্রি দুই বছরে ৪৪ শতাংশ কমে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ইউনিটে নেমে এসেছে। ট্রাকের বিক্রি ২০২৩ সালে অর্ধেকে নেমে গেলেও ২০২৪ সালে ১৬ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৭১ ইউনিটে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় জর্জরিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকটের ছাপ পড়েছে মোটরসাইকেল বাজারেও দৃশ্যমান। ২০২৪ সালে মাত্র ২.৬২ লাখ নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে—যা ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্ন এবং ২০২২ সালের সর্বোচ্চ সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশে বাজাজ মোটরসাইকেল উৎপাদন করে উত্তরা মোটরসের বিজন। প্রতিষ্ঠানটির প্ল্যানিং-এর প্রধান নাঈমুর রহমান বলেন, আমদানি খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইউনিট মূল্য না বাড়ায় মোটরসাইকেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গিয়ে কোম্পানিগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
‘তারপরও আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া কম পাচ্ছি। বিশেষ করে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ যে সাশ্রয়ী সেগমেন্ট কেনে, সেখান থেকে,’ বলেন তিনি। ২০২২ সালের শেষার্ধে টাকার অবমূল্যায়ন শুরু হলে ধনী ক্রেতারা হুড়মুড় করে গাড়ি কিনতে শুরু করে। এতে ওই বছর স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি), সেডান ও হ্যাচব্যাকের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তবে পরে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। ২০২৪ সালে ৮ হাজার ৬৫৭টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি হলেও ২০২২ সালের রেকর্ড বিক্রির তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে সেডান ও হ্যাচব্যাকের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় এসব গাড়ির বিক্রি ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০ হাজার ৪৯৯ ইউনিটে নেমে এসেছে। আগের বছর ডেলিভারি ভ্যানের বিক্রি ৬৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে ২০২৪ সালে এ গাড়ির বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে ৫২৭ ইউনিটে পৌঁছেছে। ডেলিভারি কোম্পানিগুলো তাদের বহর সামান্য সম্প্রসারণ করায় এই প্রবৃদ্ধি এসেছে।