খাল দখল করে ইউএসটিসি’র স্থাপনা নির্মাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক <<
খালের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কারণে প্রবর্তক মোড়ে ভাঙ্গতে হয়েছিল প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবন। সেই ভবন দুটি ছিল হিজড়া খালের উপর। অপরদিকে জাকির হোসেন রোডে গয়না ছড়া খালের উপর গড়ে তোলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি (ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি) ১৮ তলা ভবনটির একাংশ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ভবনটির প্রতিফ্লোরের ১৩০০০ বর্গফুটের সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটই ভাঙ্গা পড়ছে। গতকাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ টিম এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এই অভিযান চলছে।
করোনা মহামারির কারণে গত বছর খাল উদ্ধার অভিযান তেমন পরিচালিত হয়নি। ২০১৯ সালে ব্যাপক হারে হওয়ার পর এখন আবারো শুরু হলো খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম।
খালের জায়গায় ১৮ তলা এই ভবন কীভাবে গড়ে তোলা হলো? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা রেলওয়ে থেকে এক একর জায়গা বুঝে পেয়েছি। সেই জায়গায় এই ভবন নির্মাণ করেছি। খালের জায়গায় ভবন নির্মাণ করিনি।’
তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে.কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, রেলওয়ে থেকে আমাদের যে ডকুমেন্ট দেয়া হয়েছে সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে খালের ৪৫১ নম্বর দাগের কোনো জমি ইউএসটিসিকে দেয়া হয়নি। এছাড়া সিডিএ থেকে ১৬তলা ভবনটির যে অনুমোদন নেয়া হয়েছে সেখানেও খালের জায়গা অন্তর্ভূক্ত নয়। খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করে, ভবনের সামনে জায়গা খালি রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সিডিএ থেকে ১৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১৮ তলা করা হয়েছে ভবনটি।
ভবনটি খালের কী পরিমাণ অংশ দখল করেছে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহি প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘চওড়ায় শূন্য থেকে ৪০ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১২০ ফুট জায়গা দখল করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার জায়গাও রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের অক্টোবরে ইউএসটিসির উপাচার্য সিডিএতে গিয়ে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন ভবনের বাড়তি অংশ নিজ উদ্যোগে ৯০ দিনের মধ্যে ভাঙ্গবেন। সেই সময়সীমা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। আমরা প্রায় এক বছর পর আজ ভাঙ্গতে গেলাম। খালের জায়গা অবশ্যই উদ্ধার করা হবে।
এদিকে ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গায় লাভ কার হলো? এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। এই ভবনে অনেকগুলো ল্যাব ছিল, সেগুলোর কী হবে? আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাটি সমাধান করা যেতো।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক। তাঁর হাতে গড়া ভবনটি এভাবে ভেঙ্গে ফেলা মোটেও কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের আওতায় নগরীর খাল উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। এসব খালের পাশ দিয়ে রাস্তাও নির্মিত হবে।