সাগরে অবস্থান করে শক্তি সঞ্চয়, আঘাতের স্থান নিয়ে আবহাওয়াবিদদের মধ্যে দ্বিমত #
ভূঁইয়া নজরুল :
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ ১৫ ঘণ্টায় অগ্রসর হয়েছে ৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঘণ্টায় মাত্র দুই কিলোমিটার গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়ার হিসেবে তা কার্যত একই এলাকায় স্থির রয়েছে। এই স্থির থাকাই চিন্তার কারণ বাড়াচ্ছে আবহাওয়াবিদদের। সাগরে যতো বেশি সময় ধরে কোনো ঘূর্ণিঝড় স্থির থাকবে সেটি ততোই শক্তিশালী হয়ে উপকূলে আঘাত করবে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, শনিবার রাত ৯টায় তা ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেয়ার পর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এর অবস্থান ছিল ১৩৫৫ কিলোটিার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে। আজ দুপুর ১২টায় এর অবস্থান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে। গাণিতিক হিসেবে ১৫ ঘণ্টায় অগ্রসর হয়েছে ৩০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সময় এর ৫৪ কিলোমিটার কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার বেগে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ১৫ ঘন্টা পরে এসে আজ দুপুর ১২টায়ও একই গতিবেগ।
এই ধীরলয়ে চলায় তা নিয়ে এখনই পূর্বাভাস করতে রাজি নন আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা প্রধান কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখনো প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তাই এটি নিয়ে এখনো সঠিক কিছু বলা মুশকিল। এই দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে গিয়ে পানির মধ্যে যেকোনো সময় এর দিক পরিবর্তন হতে পারে।
কিন্তু ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশের খুলনা উপকূলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের আপলোড করা গতিপথের ম্যাপে দেখা যায় ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা সুন্দরবন ও ভারতীয় অংশের সুন্দরবনের উপর দিয়ে উপকূলে প্রবেশ করবে। পরবর্তীতে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকার দিকে স্থল নিম্নচাপ হয়ে অতিক্রম করবে।
অপরদিকে আবহাওয়া বিষয়ক আরেকটি স্বীকৃত ওয়েবসাইট আকু ওয়েদার বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি একটু ডান দিকে বেঁকে খুলনা উপকূল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গও আক্রান্ত হবে। কিন্তু খুলনা উপকূলে বেশি ক্ষয়সাধন হতে পারে।
ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড নামের আরেক ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে সাতক্ষীরা সুন্দরবন ও ভারতের সুন্দরবনের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে এটি উপকূলে আঘাত করবে। আগামী বুধবার তা আঘাত করতে পারে। আর আঘাতের সময় এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩৯ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে।
কিন্তু এই তিনটি সংস্থা যখন বলছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূলে আঘাত করবে তখন আবহাওয়াবিষয়ক আরেকটি জনপ্রিয় মডেল উইন্ডি বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দেখানো পূর্বাভাস ট্র্যাকে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তা মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ভারতের ভুবনেশ্বরে আঘাত করবে। আর ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত করতে করতে তা স্থল নিম্নচাপ হয়ে কলকাতা দিয়ে অতিক্রম করবে।
পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ১০ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। একইভাবে বলা হয়েছে এটি উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ রোববার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ১২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা খেকে ১২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর এখনো ঘূর্ণিঝড়ের ট্র্যাক ম্যাপ না দেয়া প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আবুল কলাম মল্লিক বলেন, গত বছরের ফনির মতো এবারো ট্র্যাক পরিবর্তন হতে পারে। আর এত দূরে থেকে ট্র্যাক সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। তাই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক আবহাওয়াবিদ বলেন, এটি স্থির থাকায় চিন্তা বাড়াচ্ছে। কারণ স্থির থাকলে শক্তি সঞ্চয় করার সুযোগ পায়। তখন ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হয়ে থাকে।
এদিকে বন্দর থেকে সব জাহাজকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঘূর্ণিঝড়ের স্ট্যান্ডিং অর্ডার অনুযায়ী চার নম্বর সংকেতে বন্দরে অবস্থানরত সকল জাহাজকে নিরাপদে বহির্নোঙ্গরে পাঠিয়ে দিতে হয়।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছে। বছরের এসময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।
টপ নিউজ