সুপ্রভাত ডেস্ক »
পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দরের সন্নিকটে একটি আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ কারখানা (শিপইয়ার্ড) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য যৌথভাবে ১.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা) সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সিংগাপুর ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জেন্টিয়াম সলিউশনস এবং ডাচ প্রতিষ্ঠান ডামেন শিপইয়ার্ডস গ্রুপ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে এটিই হবে সর্বোচ্চ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের সাথে মতিঝিলে তার অফিস কক্ষে সাক্ষাৎকালে জেন্টিয়াম সলিউশনস্ এর উপদেষ্টা বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসেন এবং ডামেন গ্রুপের নেভাল প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন পরিচালক ইফ ভ্যান ডেন ব্রোয়েক ও ডামেন শিপইয়ার্ডস এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক রাবিয়েন বাহাদুয়ের এ বিষয়ে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
এ সময় ইতোপূর্বে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি) এবং জেন্টিয়াম ও ডামেন এর মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় “ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর ডেভেলপিং অ্যা ওয়ার্ল্ড ক্লাস শিপবিল্ডিং অ্যান্ড শিপ রিপেয়ার ফ্যাসিলিটি ইন দ্য পটুয়াখালী ডিসট্রিক্ট ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক সম্ভ্যাবতা যাচাই রিপোর্ট শিল্পমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন ও হস্তান্তর করা হয়।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, জেন্টিয়ামের সহ-উপদেষ্টা অতিরিক্ত সচিব (অব:) ড. সাইদুর রহমান সেলিম, জেন্টিয়ামের কারিগরি প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আরিফ আহমেদ চৌধুরী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফায়েজুল আমীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতকালে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “সরকার বাংলাদেশকে ‘জাহাজ ক্রেতা জাতি’ থেকে ‘জাহাজ নির্মাণকারী জাতি’তে পরিণত করতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দর এলাকায় জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ মেরামত শিল্প গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয় বা বিএসইসি পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় জমির সংস্থান করবে এবং বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপনে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।”
উল্লেখ্য, পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। ২০১৪ সালে পটুয়াখালী সফরের সময় তিনি এখানে একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয় এটিকে তাদের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এ সময় জেন্টিয়াম সলিউশনস এবং ডামেন শিপইয়ার্ডস গ্রুপ বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসলে বিএসইসি’র সাথে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে কোম্পানি দু’টির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হয়। পায়রা বন্দর সংলগ্ন এলাকায় এ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রায় ১০১ একর জমির সংস্থান করে রেখেছে।
সাক্ষাতকালে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে প্রতিনিধিবৃন্দ জানান, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রচুর শ্রমিকের দরকার হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রথম পর্যায়ে আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। জেন্টিয়াম-ডামেনের মত বিশেষায়িত কোম্পানিগুলোর সাথে কাজ করে বাংলোদেশের শ্রমিকরা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে। উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তি বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হবে । ফলে দেশে ব্যবহারের জন্য এবং দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উচ্চমানের জাহাজ নির্মাণ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগি হবে এ উদ্যোগ। আমদানি বিকল্প জাহাজ তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশ্বমানের জাহাজ সরবরাহ করা যাবে। সর্বোপরি বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম জাহাজ নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক সাপ্লাই চেইন উন্নয়নে এসব দক্ষ শ্রমিকরা ভূমিকা রাখবে।