সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুফী মতাদর্শে বিশ্বাসী তিন দল নিয়ে গঠিত ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’-এর প্রথম মহাসমাবেশ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত ১৩ দফা দাবি এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে জোটটি আজ (শনিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের রাজনৈতিক শক্তি ও অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। জোটের শীর্ষ নেতারা বলছেন— এবার তারা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থিতি জানান দিতে প্রস্তুত।
জোটের নেতারা জানায়, দীর্ঘদিনের মতবিরোধ ও বিভক্তি পেরিয়ে সুফীমনা তিন দল এখন অভিন্ন অবস্থানে এসেছে। গত তিন মাসে বেশ কয়েক দফা আলোচনা ও বৈঠকের পর তারা ‘বৃহত্তর সুন্নী জোট’ নামে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর থেকেই নির্বাচন ও জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবি, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দুর্নীতিবাজ ও দণ্ডিত ব্যক্তিদের অযোগ্য ঘোষণা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান এবং মাজার–খানকা–ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
গত দেড় দশকের জাতীয় নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ এখনও গড়ে ওঠেনি বলে দাবি জোটের। তারা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দমন–পীড়ন, বিনা বিচারে হত্যা, মব সহিংসতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়েছে। এসব কারণেই দেশজুড়ে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশের পর ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ, ২৯ নভেম্বর কুমিল্লা, ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ এবং ২০ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে জোটের পক্ষ থেকে।
বৃহত্তর সুন্নি জোটের ১৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনের দিন গণভোটের ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় বৈঠকে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, দুর্নীতিবাজ ও দণ্ডিতদের অযোগ্য ঘোষণা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, পার্বত্য জেলায় বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল, আরাকান আর্মিকে করিডোর না দেওয়া, মাজার–খানকা–দরবার শরিফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা এবং স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনকালীন প্রশাসন দলনিরপেক্ষভাবে পুনর্গঠন করা।
চট্টগ্রাম মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক এ এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী হালিম বলেন, সুফীভিত্তিক তিনটি দল এখন অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এর অংশ হিসেবে আজ লালদিঘি মাঠে প্রথম মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমাবেশে তিন দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবদুন নবী আল কাদেরী বলেন, আমরা চাই সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। জাতি এমন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় দেশে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। সারাদেশে জনমত গঠনের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।



















































