নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার হয়েছে। একইসঙ্গে ১২ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করেছে চসিক।
গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে খুলশী থানার লালখান বাজারের পশ্চিম বাঘঘোনা এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) একটি টিম তাকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর-দক্ষিণ) উপপুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান।
গ্রেফতার আসামি সাহাব উদ্দিন এস জে ট্রেডার্সের মালিক। ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। এর আগে এ ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা করা হলে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উত্তর-দক্ষিণ উপপুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, ‘গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম ইয়াজদানীর কক্ষ ভাঙচুর ও মারধরের মামলার এক নম্বর আসামি সাহাব উদ্দিনকে রাত আড়াইটার দিকে গ্রেফতার করা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সাহাব উদ্দিন সরাসরি জড়িত ছিলেন। আজ (মঙ্গলবার) তাকে হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে হামলার শিকার হন প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী। কাজ না পেয়ে মামলার প্রধান আসামি সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে ঠিকাদাররা এ হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদি হয়ে খুলশী থানায় মামলাটি করেন। মামলার আসামি হিসেবে ১০ জন ঠিকাদারের নাম উল্লেখ এবং ৫-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় গ্রেফতার এস জে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিনকে। অন্য আসামিরা হলেন মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মো. ফেরদৌস, মেসার্স খান করপোরেশনের হাবিব উল্লাহ খান, মেসার্স নাজিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের নাজিম, ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্সের ইউসুফ, জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের আশীষ বাবু, ফরহাদ ও আলমগীর।
হামলা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী বলেন, ‘ঠিকাদাররা আমার কাছে টেন্ডারের তদবির করেন। আমি বলি নিয়ম অনুযায়ী কাজ হবে। এতে তারা কাজ না পেয়ে কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালিয়েছে ও মারধর করেছে।’
এদিকে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে ঘটনার দিন রাতে (২৯ জানুয়ারি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন চসিক। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজন ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির। সাত কর্মদিবসের এ কমিটির শেষ দিন ছিলো গতকাল মঙ্গলবার।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল তাবরীজকে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আজকে (মঙ্গলবার) তদন্ত কমিটির সাত কর্মদিবসের শেষ দিন হলেও আমার কাছে কোন ধরনের রিপোর্ট জমা দেয়া হয়নি, ফলে তদন্তে কি উঠে এসেছে বলতে পারছি না।’
১২ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালককে হামলার ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারদের মালিকানাধীন ১২টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছেন নগর সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এতে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর ওপর হামলার ঘটনায় এসব ঠিকাদারেরা জড়িত আছেন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হামলাকারীরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত এই ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকা-ের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলো।
কালো তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিনের মেসার্স মাহমুদা বিল্ডার্স ও মেসার্স এস জে ট্রেডার্স, সঞ্জয় ভৌমিকের মেসার্স বাংলাদেশ ট্রেডার্স, মোহাম্মদ ফেরদৌসের মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজ, সুভাষ মজুমদারের মেসার্স জয় ট্রেডার্স, মো. হাবিব উল্লাহ খানের মেসার্স খান কর্পোরেশন, মো. নাজিম উদ্দিনের মেসার্স নাজিম এন্ড ব্রাদার্স, মো. নাজমুল হোসেনের মেসার্স রাকিব এন্টারপ্রাইজ, মো. ইউসুফের মেসার্স ইফতেখার অ্যান্ড ব্রাদার্স, আশীষ কুমার দে ও হ্যাপী দের মেসার্স জ্যোতি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স দীপা এন্টারপ্রাইজ এবং আলমগীরের মেসার্স তানজিল এন্টারপ্রাইজ।
কালো তালিকাভুক্তি হওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দেশের অন্যান্য কোনো সংস্থায় উন্নয়ন কাজ করতে পারবে না।