নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
পার্বত্য পর্যটন নগরীতে সর্বশেষ কবে এমন ভিড় দেখেছেন শহরবাসী, তা যখন প্রায় ভুলতেই বসেছে, ঠিক তখনই হাজারো পর্যটকের পদভারে মুখর শহর। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের উপচেপড়া উপস্থিতি ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরি করেছে হ্রদ পাহাড়ের এ শহরে।
সংবাদকর্মী হেফাজত সবুজ বলেন, ‘কোভিড ভয়কে জয় করে যে বিপুল পরিমাণ দেশী পর্যটক এখানে ভিড় করেছে তা সাম্প্রতিকসময়ে বিরল। আসলে ঘরবন্দি মানুষ স্বস্তি খুঁজছে মুক্ত বাতাসে।’
রাঙামাটির পর্যটনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া। তিনি বলছেন, অসংখ্য পর্যটক পুরো শহরেই। আমাদের মোটেল কটেজ কোথাও একটি সিটও খালি নেই। আজ (শুক্রবার) হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে ঝুলন্ত ব্রিজ এলাকায়।’
রাঙামাটির অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠা পুলিশের পলওয়েল পার্ক ও লাভপয়েন্টের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এসআই মিজানুর রহমান জানাচ্ছেন, শুক্রবারই আনুমানিক পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পলওয়েলে এসেছে, এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বেড়াতে আসা পর্যটক। আমাদের সাতটি কটেজের একটিও খালি নেই, এ মাসের কোনো তারিখেই।’
রাঙামাটির হোটেলে স্কয়ার পার্কের স্বত্ত্বাধিকারী নেয়াজ আহমেদও জানাচ্ছেন, মনে হচ্ছে, গত দুই বছরের খারাপ সময় কাটিয়ে পাহাড়ের পর্যটন ফের আলোর মুখ দেখছে। মৌসুমের শুরুতেই মানুষের এই বিপুল উপস্থিতি আশা জাগাচ্ছে।’
রাঙামাটির শহর থেকে বহুদূরের পার্বত্য পর্যটন স্পট সাজেক। দূর পাহাড়ের এক কোণে পাহাড়শীর্ষে অবস্থিত এই মেঘমিতালীর টুকরো ভূখণ্ডটিও পর্যটকের পদভারে মুখ হয়ে উঠার তথ্যই জানাচ্ছেন সেখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
সাজেকের নীলপাহাড় রিসোর্টের মালিক আলফ্রেড লুসাই জানালেন, ‘এখানে যত পর্যটক এসেছেন, তারচেয়ে বেশি ফিরে গেছেন থাকার সুযোগ না পেয়ে। বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এখানকার প্রায় দেড় শতাধিক কটেজ হোটেল মোটেলের কোথাও কোন সিট নাই।’
শহরভর্তি পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে রাঙামাটি পুলিশও।
পুলিশের রাঙামাটি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলছেন, পর্যটকরা যেনো নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন এবং কোনভাবেই যেনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকা ও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা আছে।’
কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ইশরাত জাহান বলছেন, পাহাড় সবসময়ই আমাকে টানে। পরিবারের সবাই সমুদ্রে যেতে চাইলেও আমার ইচ্ছেতেই সবাই শেষ পর্যন্ত রাঙামাটিতে এসেছে।’
ঢাকা থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদ রহমান বলছেন, ‘পরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে এবং পর্যটকবান্ধব সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা যায়, তবে এ শহরই হবে দেশের পর্যটনের অন্যতম প্রধান গন্তব্য।’