সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
ফুটবলে পুরো ম্যাচের সময়ের মধ্যে তিন গোল করতে পারলেই বলা হয় হ্যাটট্রিক। ক্রিকেটে সেই সুযোগ নেই। ম্যাচে তিনটি কেন, এর তিনগুণ অর্থাৎ নয়টি উইকেট পেলেও সেটি হয়তো হ্যাটট্রিক হবে। পরপর তিন বলে তিনটি উইকেট নিতে পারলেই কেবল হ্যাটট্রিক হয় বোলারদের।
আর এ কারণেই ক্রিকেটে অনেক রথী-মহারথী বোলারদের নামের পাশে নেই কোন হ্যাটট্রিক। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মুত্তিয়াহ মুরালিধরন। টেস্টে ৮০০ কিংবা ওয়ানডেতে ৫৩৪ উইকেট নিলেও, কখনও হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাননি তিনি।
মুরালির মতো আরও অনেক কিংবদন্তি বোলারই রয়েছেন এ তালিকায়। তবে হ্যাটট্রিক করা বোলারদের মধ্যেও রয়েছেন অনেক নামকরা বোলাররা। যাদের আবার এই কীর্তি নিয়ে রয়েছে মজাদার সব তথ্য। এবারের প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে তেমনই সব তথ্য দিয়ে।
১০৭- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়েছে ১০৭টি। এর মধ্যে টেস্টে ৪৫, ওয়ানডেতে ৪৯ ও টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে ১৩টি হ্যাটট্রিক। ১৮৭৯ সালে ফ্রেড স্পফোর্থ টেস্টে, ১৯৮২ সালে জালাল উদ দিন ওয়ানডেতে এবং ২০০৭ সালে ব্রেট লি টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হ্যাটট্রিক।
নারী ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়েছে ৩১টি। অভিজাত ফরম্যাট টেস্টে ৩, ওয়ানডেতে ১১ এবং টি-টোয়েন্টিতে দেখা মিলেছে ১৭টি হ্যাটট্রিকের।
৭- নিজেদের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করা বোলারের সংখ্যা ৭ জন। টেস্টে ১৯৩০ সালে মরিস অ্যালম, ১৯৭৬ সালে পিটার প্যাথেরিক এবং ১৯৯৪ সালে ডেমিয়েন ফ্লেমিং অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেন। মজার বিষয় হলো প্যাথেরিক ও ফ্লেমিংয়ের হ্যাটট্রিকের তারিখও ছিল এক, ৯ অক্টোবর।
ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেছেন চারজন বোলার। সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে তাইজুল ইসলাম, ২০১৫ সালে কাগিসো রাবাদা, ২০১৭ সালে ভানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং ২০১৮ সালে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শেহান মাদুশঙ্কা।
৫- কোন নির্দিষ্ট বোলারের পক্ষে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ড লাসিথ মালিঙ্গার দখলে। তিনি একাই হ্যাটট্রিক করেছেন ৫ বার। এর মধ্যে ওয়ানডেতে তিনবার ও টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে দুইবার। ফরম্যাটভেদেও রেকর্ড এটি। মালিঙ্গার এ ৫ হ্যাটট্রিকের মধ্যে দুইবার আবার টানা চার বলে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার বলে ৪ উইকেট নেয়া অন্য বোলার হলেন রশিদ খান। তিনি টি-টোয়েন্টিতে দেখিয়েছেন এ কীর্তি।
মালিঙ্গা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুইটির বেশি হ্যাটট্রিক করা বোলার হলেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি ওয়ানডে ও টেস্টে দুইটি করে মোট চারটি হ্যাটট্রিক করেছেন। তার টেস্টের দুই হ্যাটট্রিক ছিল মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে, ১৯৯৯ সালের এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।
এছাড়া দুই ফরম্যাটে হ্যাটট্রিক করা অন্য বোলাররা হলেন মোহাম্মদ শামি (টেস্ট ও ওয়ানডে), ব্রেট লি (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) এবং থিসারা পেরেরা (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি)।
১- ক্রিকেট ইতিহাসের দুর্লভতম এক রেকর্ড গড়েছেন সোহাগ গাজী। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। যা করতে পারেনি বিশ্বের আর কোন ক্রিকেটার।
নিজের জন্মদিনে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার হলেন পিটার সিডল। ২০১০-১১ মৌসুমের অ্যাশেজে ব্রিসবেন টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি।
ম্যাচের প্রথম তিন বলে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার চামিন্দা ভাস। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েন তিনি। এছাড়া ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করা অন্য বোলার হলেন ইরফান পাঠান। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি করেন তিনি।
৩- তিন ওভার মিলিয়ে একটি হ্যাটট্রিক করার ঘটনাও রয়েছে ক্রিকেটে। ১৯৮৮ সালের পার্থ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমনটাই করেছিলেন মার্ভ হিউজ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নিজের ৩৬তম ওভারের শেষ বলে কার্টলি অ্যামব্রোসকে ফেরান হিউজ। পরে নিজের ৩৭তম ওভারের শেষ তিনি আউট করেন প্যাট্রিক প্যাটারসনকে। একইসঙ্গে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পরে ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই গর্ডন গ্রিনিজকে আউট করেন হিউজ এবং পূরণ করেন বিরলতম এক হ্যাটট্রিক। তিন ওভারে না হলেও, দুই ইনিংস মিলে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড রয়েছে কোর্টনি ওয়ালশ এবং জেওফ লসনেরও।
২- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একই ম্যাচে দুই হ্যাটট্রিকের ঘটনাও দেখে বিশ্ব। ১৯১২ সালের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই ম্যাচের দুই ইনিংসে, একই দিনে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জিমি ম্যাথুজ। দুই ইনিংসেই তার হ্যাটট্রিক বলের শিকার ছিলেন টমি ওয়ার্ড।
সেই ম্যাচে এ দুই হ্যাটট্রিকের ছয় উইকেট ব্যতীত আর কোন শিকার পাননি ম্যাথুজ। পুরো ক্যারিয়ারে তার উইকেটসংখ্যা মাত্র ১৬। তবে এর চেয়ে কম উইকেট পাওয়া বোলারের হ্যাটট্রিকের রেকর্ড অলক কাপালির দখলে। তার ক্যারিয়ারে উইকেট মাত্র ৬টি। এর মধ্যেই রয়েছে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা হ্যাটট্রিকটি।
১২৫৫০- ক্রিকেট ইতিহাসে রানের বিচারে সবচেয়ে দামি হ্যাটট্রিক স্টুয়ার্ট ব্রডের। ২০১৪ সালের হেডিংলি টেস্টে তিনি পরপর আউট করেছিলেন কুমার সাঙ্গাকার, দীনেশ চান্দিমাল এবং শামিন্দা ইরাঙ্গাকে। এ তিনজনের মোট রান তখন ছিল ১২৫৫০। যেখানে সাঙ্গাকারার একার সংগ্রহই ছিল ১১৪৯৩ রান।
এছাড়া ১০ হাজারের বেশি রান সম্বলিত হ্যাটট্রিকের ঘটনা রয়েছে আর মাত্র একটি। ২০০০ সালের পার্থ টেস্টে পরপর তিন বলে শেরউইন ক্যাম্পবেল, ব্রায়ান লারা এবং জিমি অ্যাডামসকে আউট করেছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। তখন এ তিনজনের ক্যারিয়ারের মোট রান ছিল ১১৪৫২।
৩- গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই হ্যাটট্রিক করেছিল ভারতের বোলাররা। জাসপ্রিত বুমরাহ টেস্টে, মোহাম্মদ শামি ও কুলদ্বীপ যাদব ওয়ানডেতে এবং দ্বীপক চাহার হ্যাটট্রিক করেছিলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কোন দলের জন্য এমন ঘটনা এটিই প্রথম।
অথচ ২০১৯ সালের আগে সর্বসাকুল্যে ভারতের হ্যাটট্রিক ছিল মাত্র পাঁচটি। টেস্টে ২০০১ সালে হরভজন সিং ও ২০০৬ সালে ইরফান পাঠান এবং ওয়ানডেতে ১৯৮৭ সালে চেতন শর্মা, ১৯৯১ সালে কপিল দেব ও ২০১৭ সালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন কুলদ্বীপ যাদব।
২৩৭- নিজের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের তৃতীয় বোলার ডেমিয়েন ফ্লেমিং। ১৯৯৪ সাকের সেই ম্যাচে ফ্লেমিংয়ের হ্যাটট্রিক বলের শিকার ছিলেন সেলিম মালিক। যিনি তখন খেলছিলেন রানে। হ্যাটট্রিকে পরিণত হওয়া কোন ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
খবর : জাগোনিউজ’র।
খেলা