রাতের নীরবতা ভেঙে হালদা পাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। দীর্ঘ দুই মাস ধরে অপেক্ষা। অবশেষে তিন শতাধিক ডিম সংগ্রহকারীর মুখে হাসি। দক্ষিণ এশিয়ায় কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যে কোনো সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। কিন্তু এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে এরই মধ্যে পাঁচটি জো চলে যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
রোববার রাতে মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়ে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢল নামে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হয়।
হালদা নদীর রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমার ঘাট, উরখিরচর ইউনিয়নের নাপিতের ঘাট, গহিরা ইউনিয়নের সত্তার মুখসহ হাটহাজারী উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাসমুন্সির হাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া, গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট সহ নদীর বেশ কিছু অংশে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
এ বছর দেরিতে হলেও হালদা নদীতে কাক্সিক্ষত ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের সময়ে পুরো দমে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডিম দেয়। ডিম আহরণের জন্য অনেক দিন ধরে প্রস্তুত ছিলেন জেলেরা। তারা উৎসবমুখর পরিবেশে রাত থেকেই নদীতে দলবেঁধে ডিম সংগ্রহ করতে নেমে পড়ে।
হালদা নদীতে রোববার রাতে রাউজান-হাটহাজারী উপজেলার ৩০৮ জন ১৫৫টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেন। একেকটি নৌকা ১৫ থেকে ২০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে।
সংগ্রহ করা ডিম হ্যাচারিতে নিয়ে যাবে জেলেরা। সেখানে ১৮ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু হবে। ওরা তিন দিন ধরে রেণুগুলোকে নার্সিং করবে। এরপর পোনায় পরিণত হবে সেগুলো। অর্থাৎ সংগ্রহের ৯৬ ঘণ্টা পর মা মাছের ডিম বিক্রয়যোগ্য পোনায় পরিণত হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেয়া কমেছে এই নদীতে। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি, গত বছরে তা কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি।
এ মুহূর্তের সংবাদ